মোষের জন্য গান গেয়ে জনসংযোগে মন্ত্রী

গলা খাঁকারি দিয়ে গরু খুঁটানের গান ধরলেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো— “এতদিন যে চরাইলাম, কচায় বল্‌ খুঁদিয়ে। আজ কাড়া দেখিব মরদানি। চারি পায়ে বাঁধবো, দুই শিংয়ে মাররো। সরগে পাতালে ধূলা উড়ে রে....।”

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
Share:

চাঁদের-হাট: কাড়া-খুটানে চুনিবালা হাঁসদা, চূড়ামণি মাহাতো, সমায় মাণ্ডি। নিজস্ব চিত্র

খুঁটিতে বাঁধা মোষের সামনে দাঁড়িয়ে শুকনো চামড়াটা টান করে দু’হাতে ইতিউতি ঘোরাচ্ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি। মোষ বাবাজির অবশ্য হেলদোলই নেই। এমন সময় গলা খাঁকারি দিয়ে গরু খুঁটানের গান ধরলেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো— “এতদিন যে চরাইলাম, কচায় বল্‌ খুঁদিয়ে। আজ কাড়া দেখিব মরদানি। চারি পায়ে বাঁধবো, দুই শিংয়ে মাররো। সরগে পাতালে ধূলা উড়ে রে....।”

Advertisement

কিন্তু কাড়া (মোষ) মর্দানি দেখায় কই!

শাসক দলের রাজনীতির বিপরীত মেরুতে থাকা ঝাড়খণ্ড নরেন দলের নেত্রী চুনিবালা হাঁসদাও কম যান না। মন্ত্রীর গানের সুরে সুর মিলিয়ে চুনিবালাদেবীও তান তুললেন— ‘দেখিব তুমার মরদানি’, তারপর দিলেন মোষের লেজ ধরে হ্যাঁচকা টান— ব্যস, খুঁটিতে বাঁধা মোষও তখন একবার লাফিয়ে উঠল বটে। তারপরই ঘাড় ঘুরিয়ে উল্টোদিকে গোঁতাতে গেল! আর একটু হলেই শিঙের গুঁতোয় কুপোকাত হতেন মন্ত্রী।

Advertisement

তড়িঘড়ি কিছুটা সরে গিয়ে গলা চড়িয়ে চূড়ামণিবাবু তখনও গান গেয়ে চলেছেন। মন্ত্রীর সঙ্গীরা ‘সরগে পাতালে ধুলা উড়ে রে’ ধুয়ো দিচ্ছেন। ঢোল মাদল বাজিয়ে সমস্বরে হৈহৈ করছে জনতা। রবিবার বিকেলে বাঁদনা পরবের অন্তিম পর্যায় গরু খুঁটান অনুষ্ঠানে এমনই ছবি দেখা গেল ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের বাহিরগ্রামের ফুটবল মাঠে।

গত ১০ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মন্ত্রী চূড়ামণিকে ধমক দিয়ে জনসংযোগে যেতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অজিত মাইতি দলীয় বৈঠক ডেকে ঝাড়গ্রাম জেলার নেতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, জঙ্গলমহলের বাঁদনা পরবে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।

আরও পড়ুন:দুই ট্রেনের ধাক্কা পাঁশকুড়ায়, এড়ালো বড় বিপদ

রবিবার বিকেলে জামবনির বাহিরগ্রাম মাঠে গরু খুঁটান উপলক্ষে মেলাও বসেছিল। মেলায় চূড়ামণিবাবু, সমায়বাবুরা বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারাও আমাদের আশীর্বাদ করুন। আপনাদের মনের কথা আমাদের জানান। অভিমান করে থাকবেন না।’’ পরে মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো আনন্দ বাজারকে বলেন, “মূলবাসীদের এই সংস্কৃতির পরম্পরা আমাদের ঐতিহ্য। কম বয়সে খুঁটানের দিনে অনেক গরু মোষ খেলিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন। সেই কাজটাই করছি।” সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জনসংযোগ বাড়াতে বলেছেন। আমরাও সামাজিক পালা পার্বণে যোগ দিয়ে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা বিমলকুমার মণ্ডল, সত্যজিৎ বারিক, তাপস মাহাতো, বিশ্বনাথ টুডুরা অবশ্য বললেন, “এই প্রথমবার মন্ত্রী জনপ্রতিনিধিরা আমাদের অনুষ্ঠানে এলেন।”

আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা ও তাঁর মেয়ে সাঁওতালি সিনেমার অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদাও। চুনিবালা বলেন, উৎসবের দিনে রাজনীতি নেই। আনন্দ আছে। আনন্দ উচ্ছ্বাস থাকবে। পরে অবশ্য তাঁর স্বগোতোক্তি, সামনে পঞ্চায়েত ভোট। জনসংযোগ বড় বালাই!

কয়েকদিনের বৃষ্টি সরে গিয়ে এ দিন ঝকঝকে আবহাওয়ায় ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে জমে ওঠে গরু খুঁটান। লালগড়ের প্রত্যন্ত তাড়কি গ্রামেও সাড়ম্বরে গরু খুঁটানের অনুষ্ঠান হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন