নেতারাও জানে বিদ্যুৎ চুরির কথা

গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্প-সহ একাধিক প্রকল্পে এখন প্রায় সব এলাকাতেই পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুতের আলো। বিদ্যুৎহীন গ্রাম প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকী, বিপিএল পরিবার হলে নিখরচায় বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তারপরও কেন মান্দারপুরের মতো গ্রামে অবাধে চলছে বিদ্যুৎ চুরি?

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্প-সহ একাধিক প্রকল্পে এখন প্রায় সব এলাকাতেই পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুতের আলো। বিদ্যুৎহীন গ্রাম প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকী, বিপিএল পরিবার হলে নিখরচায় বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তারপরও কেন মান্দারপুরের মতো গ্রামে অবাধে চলছে বিদ্যুৎ চুরি?

Advertisement

মূলত উঠে আসছে তিনটে কারণ। প্রথমত রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধন, দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ দফতরের সক্রিয়তার অভাব আর তৃতীয়ত মানুষের বদভ্যাস। চুরির অভ্যেস এতটাই যে, হুকিং করে শুধু বাড়িতেই নয়। বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে স্যালো থেকে গ্রামের ছোট কারখানাতেও। সমস্যার কথা মানছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরাও। জেলা বিদ্যুৎ দফতরের ওই আধিকারিকের কথায়, “বিদ্যুৎ চুরি রুখতে এখন সরকার কড়া কড়া নিয়ম চালু করেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি চুরি বন্ধ তো হয়নি।উল্টে বাড়ছে হুকিং এর রমরমা।”

প্রশ্ন, বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হচ্ছে না কেন? কেনই বা প্রকাশ্যে হুকিং বাড়ছে?

Advertisement

বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে মিলল উত্তর। ঘাটালের মান্দারিয়ার এক বাসিন্দার কটাক্ষ, “চোলাই মদের রমরমা বাড়ছে কারণ তার সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের মদত রয়েছে। হুকিংয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। সবই দাদা রাজনীতি।’’ ঘাটালের মহারাজপুর এলাকার এক শিক্ষকের ক্ষোভ, ‘‘রাজ্য সরকার রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এখন নানা রকমের উপায় খুঁজছেন। বিদ্যুৎ চুরি কি স্থানীয় নেতারা জানেন না? আর বিদ্যুৎ দফতরের অনিয়মিত ধড়পাকড়ও একটা বড় কারণ।”

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, শুধু মান্দারপুই নয়। ঘাটাল ব্লকের গঙ্গাদাসপুর, এলোচক, নারায়ণপুর, দুধের বাঁধ, মারিচ্যা-সহ ৬০-৭০টি গ্রামে অবাধে চলছে হুকিং। একই ছবি দাসপুর, সোনাখালি, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা-সহ গোটা ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন গ্রামেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ঘাটাল ডিভিশনে প্রতি মাসে আট থেকে নয় কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বাবদ আদায় হয়। হুকিং এবং চুরি বন্ধ হলে টাকার পরিমাণ আরও অন্তত পক্ষে পাঁচ কোটি টাকা তো বাড়বেই।”

এত কোটি টাকা লোকসান সত্ত্বেও কেন বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে উদ্যোগী হচ্ছে না দফতর? বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ম্যানেজার গোলক মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছি। গত মাসেই আমার ডিভিশনে ৫৭টি এফআইআর হয়েছে। এটা আরও বাড়ানো হবে।এবার নিয়ম করেই ধড়পাকড় চালাব।”

যদিও বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীর কথায়, “আমরা প্রায়শই হামলার মুখে পড়ি। তাতেও অভিযানে খামতি নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গিয়ে মার খেলে তো কোনও একসময় মনোবল কমবেই।” যদিও ঘাটালের ডিভিশনাল ম্যানেজার গোলক মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ বার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অভিযান শুরু করব। ধারাবাহিক অভিযান চলবে। শুধু তাই নয়,বিদ্যুৎ চুরির প্রমাণ হলে এবার সংশ্লিষ্ট বাড়িতে নতুন করে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়াও বন্ধ করে দেব।” ঘাটাল বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার অনিরুদ্ধ করের কথায়, “আমরা অভিযানের পাশাপাশি এবার গাঁ-গঞ্জে সচেতনতা শিবিরও করব। চুরি করলে কী শাস্তি হবে- তাও বোঝাব।”

হুকিং নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন?

ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের সাফ কথা, “এতদিন বিষয়টি তলিয়ে দেখিনি। হুকিংয়ে দলের সায় নেই। প্রশাসন বিদ্যুৎ চোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। পাশাপাশি হুকিং বন্ধে দলীয় ভাবেও আমরা প্রচার শুরু করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন