মমতার স্বপ্নের কর্মতীর্থে দুষ্কৃতীরাজ

প্রহরীহীন খোলা গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে জানলার কাচ। ভাঙা ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল। এমনকী, রয়েছে ভাঙাভাঙিতে ব্যবহৃত শাবলও। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট।

Advertisement

বিশ্বসিন্ধু দে

কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

শাটার ভেঙে চুরি। (ইনসেটে) স্টলের ভিতরে পড়ে মদের বোতল। নিজস্ব চিত্র

শিলান্যাস হয়েছে। উঠেছে দোতলা ভবনও। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে চালু হয়নি কেশিয়াড়ির কর্মতীর্থ। এখানেই শেষ নয়। কেশিয়া়ড়ির কর্মতীর্থ এখনও কার্যত দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে উঠছে। লুঠ হয়ে গিয়েছে, ফ্যান-সহ বিভিন্ন সামগ্রী।

Advertisement

২০১৬ এর নভেম্বরে একটি অনুষ্ঠান থেকে এই কর্মতীর্থের শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর না ঘুরতেই গড়ে ওঠে দোতলা বিল্ডিং। প্রশাসনের দাবি, ব্যবসা ও যাবতীয় কাজের জন্য লটারি করে স্টল হয়েছে। তবু চালু হয়নি কর্মতীর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পের কী হাল কেশিয়াড়িতে? এলাকা ঘুরে দেখা গেল, একশো চোদ্দটি স্টলের দরজা দোমড়ানো মোচড়ানো। চুরি হয়েছে লাইট, ফ্যান, বিদ্যুতের তার-সহ বাথরুমের যাবতীয় সামগ্রী। লুঠ হয়েছে জলের পাম্পও। প্রহরীহীন খোলা গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে জানলার কাচ। ভাঙা ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল। এমনকী, রয়েছে ভাঙাভাঙিতে ব্যবহৃত শাবলও। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট।

বাজার এলাকা থেকে কমপক্ষে দু’কিলোমিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে এই কর্মতীর্থ। তার উপর নেই কোনও নিরাপত্তাকর্মী। মাঠের মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় অবাধে চলে দুষ্কর্ম। সূত্রের খবর, জায়গা নির্বাচন নিয়ে সমস্যা ছিল। শেষপর্যন্ত পূর্ত দফতর জায়গা নির্বাচন করেই গড়ে তুলেছে এই প্রকল্প। ভাবা হয়নি কর্মতীর্থ যাঁদের উদ্দেশ্যে তৈরি তাঁদের কথা। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমা দণ্ডপাট বলেন, ‘‘লটারি করেই স্টল দেওয়া হয়েছে। স্টল খোলার চারদিন পর পাম্প চুরি যায়। আমরা প্রশাসনে জানিয়েছি।’’ দরজা ভাঙা এবং জিনিসপত্র লুঠের ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিন দশেক আগেই এই কাণ্ড হয়েছে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বীকার করে নিয়েছেন কোনও নিরাপত্তা রক্ষী ছিল না। গেটে ছিল না তালা। তাঁর সাফাই, ‘‘ভোটের কাজে সকলে ব্যস্ত। তাই ভোট পর্ব মিটলে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হবে।’’ ভাঙচুর, চুরির বিষয়ে থানায় জানানো হয়েছে। অবগত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা দপ্তরে।

Advertisement

সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও লুঠ সম্পর্কে অবগত নন বলে দাবি বিধায়ক পরেশ মুর্মু। তার বক্তব্য, ‘‘আমার কাছে এরকম কোনও খবর নেই। জেনে মন্তব্য করব।’’ তাঁর সাফাই, ‘‘যদি এরকম হয় নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কেশিয়াড়ির বিডিও গৌতম সান্যালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুষ্কৃতীরা লুঠ করে পালালে আমাদের কী করার আছে। প্রশাসনে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন।’’ কিন্তু কেন এখনও চালু হয়নি কর্মতীর্থ? বিডিওর বক্তব্য, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। বারবার মিটিং করেছি। কেউ দোকান না করতে চাইলে আমরা কী করব।’’ সব দেখেশুনে কেশিয়াড়িবাসীর একাংশ বিস্মিত। তাঁদের বক্তব্য, কী জন্য গড়ে তোলা হল এই তীর্থ। সেখানে এখন কী কর্ম হচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন