মনোরোগে আক্রান্ত মিতাই খুন করেন মেয়েকে 

মিতার স্বামী বছর বিয়াল্লিশের বুদ্ধদেব ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের লাউদহ বিবেকানন্দ এসটি বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মশিক্ষার শিক্ষক। তিনি ২০০৬ সাল থেকে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পালিগ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সকালে স্কুলে বেরোনোর সময়ে স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখে শ্বশুরবাড়িতে ফোন করেছিলেন পেশায় শিক্ষক বুদ্ধদেব মণ্ডল। তাঁর স্ত্রী মিতার আগের মতো সমস্যা হচ্ছে বলে শাশুড়িকে জানান তিনি। তাঁকে স্ত্রী সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করে স্কুলে চলে যান। মাঝে দু’বার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন বুদ্ধদেব। তাঁর শাশুড়িও মেয়েকে বার তিনেক ফোন করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুদ্ধদেব ভাড়া বাড়ি ফিরলে অন্য দিনের মতো দরজা খোলেননি মিতা। ডাকাডাকির পরে ভাড়া বাড়ির কর্ত্রী জানালা ফাঁক করে দেখতে পান সিলিংয়ে শাড়ির ফাঁসে ঝুলছেন মিতা মণ্ডল (৩২)। খাটে পড়ে রয়েছে চার বছরের দেবলীনা ওরফে পুচির নিথর দেহ। খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার পুলিশ দরজা ভেঙে মা ও মেয়ের দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, মিতার মানসিক সমস্যা ছিল। তিনিই নিজের মেয়েকে শ্বাসরোধ করে তারপরে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। মনোবিদদের মতে, মিতা ‘অডিটরি হ্যালুসিনেশন’-এ আক্রান্ত ছিলেন।

মিতার স্বামী বছর বিয়াল্লিশের বুদ্ধদেব ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের লাউদহ বিবেকানন্দ এসটি বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মশিক্ষার শিক্ষক। তিনি ২০০৬ সাল থেকে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পালিগ্রামে। মিতার বাপের বাড়ি বীরভূমের মহম্মদবাজার থানা এলাকার শেওড়াকুঁড়ি গ্রামে। ২০১২ সালে মিতার সঙ্গে বিয়ে হয় বুদ্ধদেবের। তাঁদের চার বছরের মেয়ে দেবলীনাকে নিয়ে রোহিণীতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন মণ্ডল-দম্পতি। পড়শিরা জানাচ্ছেন, মিতা মাঝে মধ্যেই অন্যমনস্ক থাকতেন। বুদ্ধদেবের দাবি, বিয়ের বছর খানেক পরেই তাঁকে কেউ মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কায় অস্থির থাকতেন মিতা। কলকাতায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরে তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে একই সমস্যা শুরু হয়। তখন শান্তিনিকেতনের আরেক এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় মিতাকে।

Advertisement

বুদ্ধদেবের স্কুলের প্রধান শিক্ষক খড়্গপুর থেকে যাতায়াত করেন। সেই সুবাদে রোহিনীর বাস উঠিয়ে খড়্গপুরে থাকার জন্য ভাড়ার বাড়ি খুঁজছিলেন তিনি। শনিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের এক আত্মীয়ের বিয়েতে সপরিবারে বাঁশদ্রোণী যান ওই দম্পতি। ফেরার পথে সোমবার প্রধান শিক্ষকের খড়্গপুরে বাড়িতে রাতে থাকেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালেই রোহিণীতে ফেরেন তাঁরা। বুদ্ধদেবের দাবি, ‘‘মাস আটেক সুস্থ ছিল মিতা। বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার সময়ই লক্ষ্য করি ওর মুখভার। মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ে ওকে রান্নাও করতে দিইনি। ’’

বুদ্ধদেবের দাবি, মিতা নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিল। তাহলে কেন এমন হল? এসএসকেএম হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তথা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল জানাচ্ছেন, ‘অডিটরি হ্যালুসিনেশন’ এমন এক মনের ব্যাধি, যাতে রোগী কাল্পনিক জগতে থাকেন। তিনি কল্পনায় যা শুনতে পান, যেটাকেই সত্যি বলে মনে করেন। মস্তিষ্কের ডোপামিন নামক রাসায়নিকটির মাত্রা বেড়ে গেলে এমন উপসর্গ দেখা দেয়। অসুখটা আসলে সিজোফ্রেনিয়া। এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগী তাঁর স্বামীকে কেউ মেরে ফেলবে এমন কাল্পনিক কথা শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ধারণা, কয়েকদিন আগে থেকেই উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। এই উপসর্গের রোগীরা নিজেরা সুযোগ পেলেই ওষুধ বন্ধ করে দেন। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত তাই হয়ে থাকবে। উপসর্গ থাকা অবস্থায় এমন রোগীকে একা রাখা উচিত নয়।’’ বুধবার ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের মর্গে এসেছিলেন মিতার ভাই পেশায় বিএসএফ কর্মী রাহুল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসার পরে দিদি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কাল দু’বার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছিল। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন