গায়ক: গান গাইছেন মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
তিনি মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, বদলেছে জীবনযাত্রা— এই অভিযোগেই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোকে ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই চূড়ামণিকে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা।
এ বার সেই চূড়ামণিকেই দেখা গেল অন্য ভূমিকায়। আদিবাসী-মূলবাসীদের মেলার মঞ্চে ঝুমুর গান গাইলেন মন্ত্রী। রবিবার জামবনির ব্লকসদর গিধনি এলাকার রেলওয়ে দুর্গা ময়দানে একদিনের ‘করম পরব ও সাংস্কৃতিক মিলন মেলা’র আয়োজন করা হয়। জামবনি ব্লক করম পরব কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় ঝুমুর গানের প্রখ্যাত প্রবীণ গায়ক বিজয় মাহাতোর সামনেই চূড়ামণি বাঁদনা পরবের একটি গান ধরেন, ‘এ বার আমরা যাই ফিরে ঘরে, নাঁয় গেলে গাল দিবেক ঘরে/অহিরে কনে ত দেত ভালা ঝিলিমিলি শাড়ি রে/ কনে ত দেত ধেনু গাই/কনে ত দেত ভালা দুঅ কানের সনা গো/ কনে ত দেত সিঁথিকে সিন্দুর।’
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী চূড়ামণিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘তুমি তো আগে চাষ করতে। এখন করো না?’’ মন্ত্রী চূড়ামণির জবাব ছিল, ‘‘না।’’
তখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে রাস্তায় নেমে, মানুষের কাছে পৌঁছে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পরই আদিবাসী মেলায় চূড়ামণি গান গাওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেরই ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলায় জনসংযোগের কৌশল বদল করছেন মন্ত্রী। এতদিন তিনি আদিবাসী-মূলবাসীদের সঙ্গে সামাজিক সংযোগ সেই অর্থে বজায় রাখতেন না। তাই দুর্গাপুজোর আগে কুড়মিদের অবরোধ কর্মসূচি ‘ডহর ছেঁকা’-র বিরোধিতা করে সমালোচিত হন চূড়ামণি। কুড়মি সমাজ তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়।
তবে কি মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েই ‘ফিরে চল মাটির টানে’?
সোমবার এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী চূড়ামণি বলেন, “দিদি আমাদের মাথার উপর আছেন। ওঁর আশানুরূপ কাজ না হলে উনি বকতেই পারেন। আমি মানুষের সমস্যায় পাশে থাকার চেষ্টা করি। দিদি আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন। সেই চেষ্টাই করছি।”
কুড়মি সমাজের নেতারা অবশ্য খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না। বিশিষ্ট ঝুমুরগায়ক তথা কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি বিজয় মাহাতো বলেন, “কুড়মিদের সমস্যা নিয়ে উনি তো সে ভাবে ভাবেননি। আমরাও চাই, উনি মানুষের পাশে থাকুন।’’ আর বিশিষ্ট কুড়মি সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতোর মন্তব্য, “মন্ত্রীর জনসংযোগ কই! উনি তো কোনও সমস্যা শুনতেই চান না। গান গেয়ে কী হবে!”