প্রতীকী ছবি।
অন্য কয়েকটি জেলায় আগেই সমর্থন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজ হারা শ্রমিকেরা এই প্রকল্পে এতদিন কোনও টাকা পাননি। পুজোর আগে ‘সমর্থন’ প্রকল্পের বরাদ্দ এল পশ্চিম মেদিনীপুরে। আবেদনকারী সব শ্রমিকের জন্য অবশ্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে প্রায় তিনশোজন শ্রমিকের জন্য এই প্রকল্পের বরাদ্দ এসেছে। পরে পরে আরও কয়েকটি পর্যায়ে বরাদ্দ আসার কথা। সম্প্রতি প্রায় তিনশোজন শ্রমিকের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে।
রাজ্য সরকার জেলায় এই প্রকল্পের তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছে। এই কমিটিই সব দেখভাল করছে। কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, “প্রথম পর্যায়ের অর্থ এসেছে। তা উপভোক্তাদের দেওয়া শুরু হয়েছে।” কমিটির এক সদস্যের কথায়, “মাস কয়েক আগেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে আমরা রাজ্যের কাছে প্রায় ২,৭০০ শ্রমিকের নাম পাঠিয়েছি। যাঁরা নোট বাতিলের পরে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন। জেলায় আরও আবেদন এসেছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও শ্রমিকের নাম রাজ্যে পাঠানো হতে পারে।”
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জেরে ভিন্ রাজ্যে কাজ হারিয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য ‘সমর্থন’ প্রকল্পের ঘোষণা করে রাজ্য। প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে ইতিমধ্যে অনেকে আবেদন করেছেন। প্রকল্পের সুবিধে চেয়ে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মেদিনীপুর গ্রামীণের সুশান্ত আদক, অসিত দোলুইরা। তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে সোনার কাজ করতেন সুশান্ত। নোট বাতিলের পরে কাজ ছেড়ে গ্রামে ফেরেন। সুশান্তের কথায়, “প্রকল্পের টাকাটা পেলে একটা দোকানঘর করব।’’ মুম্বইতে সোনার কাজ করতেন অসিত। অসিতও বলছেন, “টাকাটা পেলে দোকানঘর করার কথাই ভেবেছি।”
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রকল্পের জন্য প্রথমে ২,১০০ জন শ্রমিকের নাম পাঠানো হয়েছিল রাজ্যে। পরে আরও ৬০০জনের নাম পাঠানো হয়। বিভিন্ন ব্লক থেকে জেলায় অবশ্য আবেদন এসেছে এর কয়েকগুণ বেশি। প্রায় ১২ হাজার। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, প্রকল্পের সুবিধে পেতে হলে শ্রমিকদের ব্লক প্রশাসের কাছে আবেদন করতে হত। এই আবেদন খতিয়ে দেখার কথা সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার আইসি কিংবা ওসি-র। আইসি-ওসি’রা বিডিওকে সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই ওই শ্রমিকের আবেদন জেলায় পাঠানোর কথা। সেই মতোই কাজ হয়েছে।
প্রকল্পের জন্য জেলাস্তরে যে কমিটি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার, সেই কমিটি ব্লক থেকে আসা আবেদন খতিয়ে দেখেছে। এরপরই প্রকল্পের সুবিধে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের নাম রাজ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজ্যের ১০টি জেলায় এই প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, হাওড়া জেলায় এই প্রকল্প চালু হয়। এ বার বাজেটেও এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়। প্রকল্পটির জন্য বাজেটে ২৫০ কোটি টাকা রাখা হয়। ৫০ হাজার কাজহারা শ্রমিককে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা বলা হয় বাজেটে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর, মেদিনীপুর গ্রামীণ, খড়্গপুর গ্রামীণ প্রভৃতি এলাকার বহু শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সমস্যায় পড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক এলাকায় ফিরে আসেন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, এই প্রকল্পের উপভোক্তারা ৫০ হাজার টাকা পাবেন। সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে এই টাকা দিয়ে কোনও ব্যবসা বা স্বনির্ভর প্রকল্প চালু করতে হবে। জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি অজিতবাবু বলেন, “আমাদের সরকার ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজহারা
শ্রমিকের পাশে থাকবে।” ওই কমিটির এক সদস্যের কথায়, “প্রথম পর্যায়ে কিছু অর্থ এসেছে। পরে আরও অর্থ বরাদ্দ হবে।