মোসলেমা বিবি
খাবার নেই ঘরে। তাই দোকান থেকে ধার করে বিস্কুট কিনে এনে ১১ মাসের ছেলেকে খাওয়াচ্ছিলেন মোসলেমা বিবি। সেই সময় মদ খেয়ে ঘরে ফেরে স্বামী মণিরুল গায়েন। দুপুরবেলা মদ খেয়ে ফেরায় প্রতিবাদ করে মোসলেমা। এটাই তাঁর অপরাধ। অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় মণিরুল ও দেওর পিন্টু মিলে প্রথমে মারধর করে মোসলেমার দাঁত ভেঙে দেয়। চিৎকার শুরু করায় এরপর শাশুড়ি, ননদ মিলে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তাঁর গায়ে। সোমবার বিকেলে তমলুক থানার ঘোসখানা গ্রামের এই ঘটনায় গুরুতর জখম মোসলেমা এখন পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে।
বছর ছাব্বিশের মোসলেমাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তমলুক জেলা হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই তমলুক থানায় মোসলেমার মা আসমিনা বিবি মেয়ের স্বামী, শাশুড়ি, ননদ ও দেওরের বিরুদ্ধে মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক স্বামী, শ্বাশুড়ী ও ননদ। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “পিন্টু গায়েন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।”
বছর দু’য়েক আগে কোলাঘাট থানার দক্ষিণ জিয়াদা গ্রামের বাসিন্দা মোসলেমার সঙ্গে বিয়ে হয় ঘোসখানা গ্রামের রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করা মনিরুলের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মোসলেমার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হত বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডের সামনে বসে আসমিনা বিবি অভিযোগ করেন, ‘‘বছরের অর্ধেক দিন মণিরুল কাজে যেত না। ওদের একটা ১১ মাসের ছেলে আছে। বাড়িতে বাচ্চার খাবার নেই অথচ টাকা ধার করে মদ খেত মণিরুল।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খরর, সোমবার প্রথমে মারধরের পরও রেহাই মেলেনি মোসলেমার। হাত-পা দ়ড়ি দিয়ে বেঁধে মোসলেমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় শাশুড়ি, ননদ। তারপরে দরজার শিকল তুলে দিয়ে তারা সকলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ। সরকারি আইনজীবী সফিউল আলিখান জানান, মঙ্গলবার পিন্টু গায়েনকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিনের আর্জি খারিজ করে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।