মুকুল প্রসঙ্গ এড়াচ্ছেন একদা তাঁর ঘনিষ্ঠরাই

লড়াইটা ফের সেই জমি রক্ষার। জমিরক্ষা আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামকে ঘিরে প্রকাশ্যে চলে আসা এ বারের লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা অবশ্য একেবারেই রাজনৈতিক। এক সময় যে তৃণমূলের হাতে ছিল নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের রাশ, এখন সেই দলেরই অন্দরেই অন্য সমীকরণের আভাস। শনিবার ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ উপলক্ষে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিন তিন বার বাধা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়। আর সেই ঘটনার পরই জেলা তৃণমূলের অন্দরের বদলে যাওয়া সমীকরণটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

বিক্ষোভের মুখে মুকুল। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

লড়াইটা ফের সেই জমি রক্ষার। জমিরক্ষা আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামকে ঘিরে প্রকাশ্যে চলে আসা এ বারের লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা অবশ্য একেবারেই রাজনৈতিক।

Advertisement

এক সময় যে তৃণমূলের হাতে ছিল নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের রাশ, এখন সেই দলেরই অন্দরেই অন্য সমীকরণের আভাস। শনিবার ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ উপলক্ষে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিন তিন বার বাধা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়। আর সেই ঘটনার পরই জেলা তৃণমূলের অন্দরের বদলে যাওয়া সমীকরণটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীর বিরোধী শিবিরের লোক হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুরের যে সব তৃণমূল নেতা এত দিন মুকুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁরাই এখন মুকুলের নাম পর্যন্ত এড়িয়ে চলছেন। শনিবার বিক্ষোভের মুখে মুকুলবাবুর পাশে দেখা মেলেনি একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের কারও। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন শুধু হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা।

এতদিনের চেনা সমীকরণ হঠাৎ বদলে গেল কেন?

Advertisement

গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দুকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে কার্যকরী সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয় রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে। তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতি পদ থেকে শুভেন্দুকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অধিকারী পরিবারের ক্ষমতা খর্ব করার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন তাঁদের বিরোধী শিবির। এরপরই জেলায় দলের যুব সংগঠনের ব্যানারে তমলুক রাজ ময়দানে যে প্রকাশ্য সভার আয়োজন করা তাতে হাজির ছিলেন তৎকালীন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও অধিকারী পরিবারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত জেলার একাধিক বিধায়ক।

কিন্তু সারদা-কাণ্ডে তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পর থেকেই মুকুল দলনেত্রী মমতার বিরাগভাজন হয়েছেন। বদলে গিয়েছে দলের অন্দরের সমীকরণ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ পদ থেকে মুকুল রায়কে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর দলে প্রভাব বেড়েছে অধিকারী পরিবারের। শুভেন্দু-শিশির অধিকারীদের উপর ভরসা দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় ‘শ্যাম রাখি না কূল’ অবস্থায় পড়েছেন জেলায় মুকুল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতারা। মুকুল রায়ের বর্তমানে যা অবস্থান, তাতে তাঁর পাশে থাকার ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই।

জেলায় তাঁর পাশে যে তেমন কেউ নেই, সেই ইঙ্গিত অবশ্য ইতিমধ্যে পেয়েই গিয়েছেন মুকুলবাবু। শনিবার শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে নন্দীগ্রামে আসার আগাম ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রামে ঢোকার পথে মুকুলবাবুর কনভয়কে বাধা দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে পথে নেমেছিলেন তৃণমূলের কর্মীরাই। প্রথমে নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়ায়, এরপর তেখালি সেতু আর সবশেষে ভাঙাবেড়া সেতুর মুখে তৃণমূলের পরিচিত কর্মীরাই ব্যানার, স্লোগান দিয়ে মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। আর একপ্রকার অসহায়ভাবে মুকুলবাবুকে ফিরে যেতে হয়েছে শুভেন্দুর খাসতালুক থেকে। সঙ্গী ছিলেন কেবলমাত্র হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা।

শুধু তাই নয় দলের সাংসদ মুকুলবাবুকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে জেলার কোনও নেতা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেনি। কিছুদিন আগেও মুকুল শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত জেলার এক বিধায়ক বলেন, “মুকুলবাবুর নন্দীগ্রামে আসা নিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা যা বলেছেন আমি তার সাথে সহমত পোষণ করছি।” জেলা আর এক বিধায়কের দাবি, “আমরা তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে রয়েছি। দলে আমরা মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কারও অনুগামী নই। আমরা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ এমনটা ভাবা ঠিক নয়। আমরা প্রথম থেকেই সরাসরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক।” আর মুকুলবাবুকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জেলা থেকে নির্বাচিত বিধায়ক তথা রাজ্যের এক মন্ত্রীর মন্তব্য,“আমি আদার ব্যাপারী। জাহাজের খবর নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।” সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমি বরাবরই দিদির ঘনিষ্ঠ। দিদির নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন