ভরাট: এ ভাবেই খড়্গপুরের ভবানীপুরে মমতাজ মিঞার পুকুর বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
ছিল পুকুর, তারপর হল ডোবা। ক্রমে সমতল হয়ে সেই জমিই আবর্জনা ফেলার অবাধ ক্ষেত্র হয়ে উঠল। এখানেই শেষ নয়, এক সময় ওই জমিতেই মাথা তুলল বাড়ি। মিউটেশন করে তা বৈধ স্বীকৃতিও পেয়ে গেল।
এ ভাবেই খড়্গপুর শহরে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভও রয়েছে। তবে ভয়ে কেউই মুখ খুলছে না। প্রতিবাদ করতে গেলে শাসানি শুনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। টাকার খেলাতেই নাকি এই বেআইনি কারবার চলছে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ খড়্গপুরবাসী। তাদের অভিযোগ, পুর-নজরদারির অভাবেই একের পর এক পুকুর ভরাট হচ্ছে। আর পুরসভা শুধু বিজ্ঞপ্তি জারি করেই দায় সারছে।
এই রেলশহর বহরে বাড়ার সঙ্গে ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকশো পুকুর খনন হয়েছিল। বেশ কিছু বড় পুকুরের নামে এলাকার নামকরণও হয়েছে। কিন্তু সেই সব পুকুরই ভরাট হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই মুহূর্তে সুভাষপল্লি, ইন্দা, বুলবুলচটি, ভবানীপুর, ঘোষপাড়া এলাকায় অবাধে পুকুর ভরাট চলছে। ক’দিন আগে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বুলবুলচটিতে পুকুর ভরাট ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। তারপর ইন্দা-জফলা রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলার নামে পুকুর বোজানোর অভিযোগ ওঠে। এই প্রবণতা ভবানীপুর ও সুভাষপল্লিতে বেশি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুভাষপল্লি কালীমন্দিরের পিছনে যতীন মিত্রের পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। একবার খড়্গপুরের পুরপ্রধান ওই পুকুর কাঁটাতার দিয়ে ঘিরেছিলেন। ওই পুকুর পুরসভার হাতে এলে সুইমিংপুল বা পার্ক গড়ার পরিকল্পনাও হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী মনোজ মাইতি বলছিলেন, “কারা পুকুর ভরাট করছে জানি না।”
৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরে মমতাজ পুকুর ভরাটও চলছে দীর্ঘ বছর ধরে। এক সময় এই পুকুরের মালিক ছিলেন মমতাজ মিঁয়া। পরে তিনি স্থানীয় ঘোষ পরিবারকে ওই পুকুর বিক্রি করেন। এখন ঘোষ পরিবারের পক্ষ থেকেই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। পুকুর পাড়ের বাসিন্দা সুব্রত পোদ্দার বলছিলেন, “পাঁচ বছর ধরে পুকুর ভরাট চলছে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না।” স্থানীয় এক পানদোকানিরও বক্তব্য, “প্রতিবাদ করলেই চোখরাঙানি সহ্য করতে হয়। আসলে এ সব নিয়ে পুরসভায় টাকার খেলা চলছে।” যদিও ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ কুণ্ডুর দাবি, “পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আমিও বিষয়টি নজরে রাখছি।”
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার কাছে সেনগুপ্ত পুকুরের হাল আরও খারাপ। এখানে পুকুর বুজিয়ে একের পর বাড়ি উঠে যাচ্ছে। কয়েকটি বাড়ির মিউটেশন পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর সুনীতা গুপ্তের বক্তব্য, “আমি ওই পুকুর ভরাটে বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্বতন কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা টাকার বিনিময়ে ওই পুকুরের মিউটেশন করিয়ে দিয়েছেন।” যদিও সত্যদেও শর্মা বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। একসময় আমিই ওই পুকুরের ভরাট বন্ধের জন্য পুরসভায় চিঠি দিয়েছিলাম। পরে কী ভাবে সেখানে মিউটেশন হয়েছে জানি না।” শহর জুড়ে পুকুর ভরাটের অভিযোগ মানতে নারাজ পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও। তাঁর কথায়, “জানা নেই কোথায় পুকুর ভরাট হচ্ছে। শুধু আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন।’’ কাউন্সিলরদের সজাগ হওয়ার নিদান দিয়েছেন তিনি।