পুর অভিযানেও কাটেনি সংশয়

খড়্গপুর শহরের একের পর এক ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মিলছে। বেশ কয়েকজন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি দেখে পুরসভাকে ডেঙ্গি রোধে সচেতনতা অভিযান চালানোর কথা বলে স্বাস্থ্য দফতর। নিয়মিত অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিয়মিত সাফাইয়ের বালাই নেই। ভ্যাটে জমছে আবর্জনার স্তূপ। নিকাশি নালার হালও তথৈবচ। কোথাও জঞ্জালে আটকে জল, আবার কোথাও নোংরা জলে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। ডেঙ্গি রোধে অভিযানে এমন ছবি দেখতে হল স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। শনিবারের সাফাই অভিযানের পর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, একদিনের অভিযানের পর যেন আবার আগের অবস্থা ফিরে না আসে।

Advertisement

খড়্গপুর শহরের একের পর এক ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মিলছে। বেশ কয়েকজন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি দেখে পুরসভাকে ডেঙ্গি রোধে সচেতনতা অভিযান চালানোর কথা বলে স্বাস্থ্য দফতর। নিয়মিত অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়। শনিবার সকাল-সকাল খড়্গপুর শহরের নিউ সেটলমেন্টের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেই ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। তাই এ দিন এই ওয়ার্ড দিয়েই শুরু হয় অভিযান। এলাকা জুড়ে আবর্জনা সাফাইয়ে নামেন প্রায় ৪০ জন শ্রমিক। সরেজমিন সেই কাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী, মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল।

হাসপাতাল চত্বরও পরিষ্কার করা হয় এ দিন। শুধু সাফাই অভিযান নয়, জেলা প্রশাসনের কর্তা ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা এ দিন এক সচেতনতা শিবিরেও যোগ দেন। কিছুদিন আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়াই রাহুল। তাঁর বাবা ওয়াই শ্রীনিবাস রাও বলছিলেন, “যে ভাবে ওয়ার্ডের চারপাশ পরিষ্কার হল, এ ভাবে নিয়মিত অভিযান চালানো হলে আর ডেঙ্গি হবে না। আমরা তাই খুশি।” কিন্তু কেন এতদিন ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে ছিল? ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূজা নায়ডুর বক্তব্য, “এটা রেল এলাকার ওয়ার্ড। রেল কর্তৃপক্ষ লোক পাঠালেও কাজ চোখে ধরা পড়ে না। আমার হাতে তিন জন শ্রমিক রয়েছে। সেই লোকবল দিয়ে তো এত বড় ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখা অসম্ভব।”

Advertisement

শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড এমন অভিযান দরকার বলে মানছেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার। তিনি বলেন, “এমন একটি অভিযান প্রয়োজন ছিল। আমরা পুরসভার মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অভিযান চালাব। রেলের বাধার প্রশ্ন নেই।” অতিরিক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিসবাবুও বলছেন, “বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশাপাশি আমরা হাসপাতাল চত্বরে সাফাইয়েও জোর দিয়েছি। সচেতনতা ফেরানোর কাজও হচ্ছে। মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গি রোধ মুশকিল।”

ডেঙ্গি রোধে জল জমিয়ে না রাখা, মশারি ব্যবহার, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দেওয়া হয় অভিযানে। উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “প্রথম দিনের অভিযান ভাল হয়েছে। এলাকায় সত্যিই পরিচ্ছন্নতার অভাব ছিল। রেলও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।” আপাতত ঠিক হয়েছে, অভিযানের পাশাপাশি যে সমীক্ষা চলছে সেই রিপোর্ট দেখে পুরসভার পরিদর্শক ও নোডাল অফিসার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “রেলের ওয়ার্ডে সত্যিই এমন অভিযানের প্রয়োজন রয়েছে। পুর এলাকার কিছু ওয়ার্ডেও এ ভাবে সাফাই অভিযান দরকার। আমাদের সাফাইকর্মীরা অবসর নেওয়ায় অস্থায়ী কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।’’ তিনি জানান, শ্রমিক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরকে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। সমীক্ষার রিপোর্টেও গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন