Panchayat Election 2023

 সংঘাত মেটাতে 'নিষ্প্রভ' ব্লকের 'বেতাজ বাদশা'

মেদিনীপুর থেকে গিয়ে বাম দূর্গে ফাটল ধরিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রকে পরাজিত করেও নিজের দলের সংঘাত এড়াতে পারেননি প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ। 

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ০৮:৫৮
Share:

নারায়নগড়, একসময়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল যে ব্লক সেটাই এখন জেলা তৃণমূলের দৃষ্টান্ত। প্রতীকী চিত্র।

খড়্গপুর: কোথায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই? না সাধারণ জ্ঞানের কোনও প্রশ্ন নয়। উত্তর দিলে পরীক্ষায় বাড়তি নম্বর পাওয়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই। তবু রাজনীতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন এ প্রশ্ন তাঁদের আন্দোলিত করলেও করতে পারে। পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসতে পারে। এমন জায়গা আছে নাকি?

Advertisement

আছে। তার নাম নারায়ণগড়। একসময়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল যে ব্লক সেটাই এখন জেলা তৃণমূলের দৃষ্টান্ত। আপাত দৃষ্টিতে এই ব্লক তৃণমূলের গোষ্ঠীমুক্ত। এখন ব্লকের ‘বেতাজ বাদশা’ তৃণমূল বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট। তৃণমূলশ্রুতি, তাঁর কথা ছাড়া ব্লকে না কি ব্লকের একটা পাতাও নড়ে না! এমনকি ‘বশ মেনেছে’ তৃণমূলে একসময়ে তাঁর কট্টর বিরোধী প্রাক্তন ব্লক সভাপতিও। কিন্তু কোন জাদুকাঠি প্রয়োগ করেছেন ‘জাদুকর’ বিধায়ক সূর্য? তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলছেন, “দীর্ঘদিন দল করেছি, অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আখেরে নিটফল শূন্য। অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বয়সও বাড়ছে। শেষ জীবনটা আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত করে কাটাতে চাই না। সূর্য অট্ট বিধায়ক হওয়ার পরে আমার দলীয় কার্যালয়ে এসে একসঙ্গে কাজের বার্তা দিয়েছিলেন। এখন যা হয় একসঙ্গে আলোচনা করেই হয়।”

অবশ্য বছর দু’য়েক আগেও এমন মিহির-সূর্যের গোষ্ঠীর লড়াইয়ে রক্ত ঝরেছে নারায়ণগড়ে। মেদিনীপুর থেকে গিয়ে বাম দূর্গে ফাটল ধরিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রকে পরাজিত করেও নিজের দলের সংঘাত এড়াতে পারেননি প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ। মকরামপুরে বোমা বিস্ফোরণে নাম জড়িয়েছিল সূর্য অট্টের ঘনিষ্ঠ লক্ষ্মীকান্ত শিটের। তবে ক্রমেই ব্লকে বেড়েছে সূর্য অট্টের দাপট। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থিপদ নিয়ে অশান্তিতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিহির দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি বিজেপির জেলা সভাপতি মিহিরকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ায় আরও উজ্জীবিত হয় সূর্য শিবির। নারায়ণগড় থেকে কার্যত সরে আসতে বাধ্য হন তৎকালীন বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষও। তবে মিহির দল ছাড়েননি। বরং শেষ বিধানসভা ভোটের আগে ব্লকে কাজকর্মের বরাত নিয়ে সূর্য অট্টের বিরুদ্ধে ব্লক অফিসে ধর্নায় বসেন মিহির। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রথম পর্যায়ে দেখা যায়নি তৃণমূলের তৎকালীন ব্লক সভাপতি মিহিরকে।

Advertisement

তৃণমূলের একাংশের দাবি, আইপ্যাকের প্রতিনিধিদের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া সূর্যকে সমর্থনে পরে দলের ‘চাপে’ মিহির মাঠে নামলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। তবে এমন আবহে সূর্য অট্ট জিতে যাওয়ায় দলে কার্যত কোণঠাসা হয়েই সমাঝোতার পথে হাঁটেন মিহির। আর ব্লকের ‘শেষ কথা’ হয়ে ওঠেন সূর্য। ব্লকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নির্মূল করা নিয়ে বিধায়ক সূর্য বলেন, “সবাই তো দলটা করতে এসেছে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে যেটা করেছি সেটা আগের বিধায়ক প্রদ্যুতবাবু পারেননি বলেই হয়তো বিভাজন থেকে গিয়েছিল।” অবশ্য একথা মানতে নারাজ প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের রাজ্য নেতা প্রদ্যোত ঘোষ। তিনি বলেন, “বিধায়ক হওয়ার পরে দু’পক্ষ নিয়ে বহুবার বসেছি। এখন যদি সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারে মিটে থাকে সেটা দলের মঙ্গল। আগামী নির্বাচনের ফল তার প্রমাণ দেবে।”

সংঘাতের অভিমুখ বদলেছে। এখনও সংঘাতে ব্লক তৃণমূল বনাম প্রশাসন। বিডিও-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি। ব্লকের ‘শেষ কথা’ হয়েও কেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় উদ্যোগী হচ্ছেন না বিধায়ক সূর্য, সেই প্রশ্ন উঠছে। এমন ঘটনায় সূর্যের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলেই দাবি তৃণমূলের একাংশের। বারবার সূর্যের অনুগামীদের হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সুকমলা বেরা। এই আন্দোলনের পিছনে কে সেই প্রশ্নে সুকমলা বলেন, “বিধায়ককে বাদ দিয়ে কি কর্মাধ্যক্ষরা বিডিওর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে! সেটা হয়!” বিধায়কের সমর্থন নিয়ে অকপট মিহিরও। বলছেন, “বিধায়কের যদি সমর্থন না থাকত তবে নিশ্চয়ই এসব বন্ধ করার কথা বলতেন। বিধায়কের অনুমতি নিশ্চয়ই আছে। সেটা প্রকাশ্যে না-ও হতে পারে।”

সরাসরি স্বীকার না করলেও সুর চড়িয়ে বিধায়ক বলছেন, “বিডিও যদি লক্ষ-লক্ষ সরকারি টাকা তছরুপ করে থাকেন তার সত্য-মিথ্যা প্রমাণের দায়িত্ব যেমন তাঁর, তেমন দেখার দায়িত্ব জেলাশাসকের। অনেক আগেই জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। কিছু হয়নি। এটা অন্যায়।” (সহ প্রতিবেদন: বিশ্বসিন্ধু দে। শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন