আজ থেকে লিগের খেলা

মহিলা ফুটবল ঘিরে নয়া স্বপ্নের শুরু

আর চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা নয়। গাঁ-গঞ্জেও ফুটবল পায়ে মাঠ কাঁপাচ্ছে মেয়েরা। পরিস্থিতি দেখে মহিলা ফুটবল লিগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেদিনীপুর মহকুমা (সদর) ক্রীড়া সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:১৫
Share:

আর চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা নয়। গাঁ-গঞ্জেও ফুটবল পায়ে মাঠ কাঁপাচ্ছে মেয়েরা।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে মহিলা ফুটবল লিগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেদিনীপুর মহকুমা (সদর) ক্রীড়া সংস্থা। আজ, শনিবার থেকে এই লিগ শুরু হচ্ছে। আগামী ১৭ জুলাই ফাইনাল। খেলবে মোট ১২টি দল। তবে আগ্রহ দেখিয়েছিল ২৬টি দল। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীত তোরই এবং সন্দীপ সিংহ বলছেন, “গত কয়েক বছরে জেলায় মহিলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। গ্রামেগঞ্জে ফুটবল নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এখন রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে তবেই মেয়েদের মাঠে নামানো হয়। লিগ চালু হলে মহিলা খেলোয়াড়রা উত্‌সাহিত হবেন।” মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তথা মেদিনীপুরের (সদর) অমিতাভ দত্ত যোগ করছেন, “এখন নানা এলাকায় মহিলা ফুটবল ক্যাম্প হয়। লিগ চালুর ফলে অনেক প্রতিভা সামনে আসবে।”

আগে শুধু মেদিনীপুরেই লিগের খেলাগুলো হত। এ বার শালবনি-গড়বেতা-কেশপুরেও লিগের খেলা হবে। মহিলা ফুটবলকে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। শালবনি, গড়বেতায় স্টেডিয়াম রয়েছে। কেশপুরে খেলা হবে কলেজ মাঠে। মহিলা ফুটবল লিগ চালুর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে আরও সাহস আসবে বলেই মনে করেন প্রাক্তন ফুটবলার অমিয় ভট্টাচার্য। এক সময় কলকাতার মাঠে দাপিয়ে খেলে আসা, মেদিনীপুরের বাসিন্দা অমিয়বাবুর কথায়, “গ্রামে অনেক ভাল ভাল মেয়ে খেলোয়াড় রয়েছে। এলাকার বাইরে বেরিয়ে খেলার সুযোগ পেলে ওদের সাহস বাড়বে। সব প্রতিবন্ধকতা পিছনে ফেলে তারা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবে।” তাঁর মতে, প্রদর্শনী ম্যাচে ১০-১৫ মিনিটের খেলা হয়। স্বল্প সময়ে প্রতিভা বোঝা যায় না। লিগের খেলা শুরু হলে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় চেনাও সহজ হবে। প্রাক্তন ফুটবলার অমিয়বাবুর কথায়, “মহিলা ফুটবল লিগ চালু করাটা খুব জরুরি ছিল। যত বেশি প্রতিযোগিতামূলক খেলা হবে, তত বেশি প্রতিভা খুঁজে পাওয়া সম্ভব।” মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মাল বলেন, “জেলার অন্য তিনটি মহকুমাকেও বলেছি, মহিলা ফুটবল লিগ চালু করা যায় কি না দেখতে। চারটে মহকুমায় মহিলা ফুটবল লিগ হলে মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাও মহিলা ফুটবল লিগ চালুর সব রকম চেষ্টা করবে।”

Advertisement

বছর কয়েক হল রাজ্যের মহিলা ফুটবল মানচিত্রে ঢুকে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, শালবনির কয়েকজন খেলোয়াড় ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে। মাওবাদী মোকাবিলায় জনসংযোগের লক্ষ্যে পুলিশ আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের হাত ধরেই মেয়েদের ফুটবলের উন্মাদনা শুরু। এরপরই গ্রামে গ্রামে ফুটবলের আসর বসানোর ভাবনাচিন্তা হয়। গত বছর এই টুর্নামেন্টে মহিলাদের ৫৭টি দল খেলেছিল। পুরুষ দলের সংখ্যা ছিল ৫৬। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্যতম সদস্য বিদ্যুত্‌ বসু বলছেন, “গ্রামেগঞ্জে প্রতিভা রয়েছে। শুধু তুলে আনতে হবে।” সাফল্যও মিলছে। শালবনির সঞ্চিতা মাহাতো স্কুল ফুটবলে (অনুর্ধ্ব) রাজ্য দলের হয়ে খেলেছে। গত বছর স্কুল ফুটবলে এ জেলার দল রাজ্যে রানার্স হয়। জেলার হয়ে মাঠে নেমেই সকলের নজর কাড়ে বছর চোদ্দোর মেয়েটি। রাজ্য দলের হয়ে খেলার সুযোগ আসে। জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক সোমনাথ দাস বলেন, “জেলায় মহিলা ফুটবলে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। অনেকে প্রচুর পরিশ্রম করে। ভাল প্রশিক্ষণ পেলে ওরা অনেক দূর এগোবে।”

এক সময় মেদিনীপুরের ফুটবল ঘিরে প্রচুর উত্‌সাহ ছিল। এখনও খেলা থাকলে বিভিন্ন পাড়ায় চোখে পড়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল বা আর্জেন্তিনা-ব্রাজিলের পতাকা। অবশ্য দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফুটবল ঘিরে উত্‌সাহটা অনেকটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। তাই প্রথম বিভাগীয় ফুটবল লিগের ফাইনালে জেলার দুই সেরা দল মাঠে নামলেও দর্শকাসন থাকে ফাঁকা। মহিলা ফুটবলের হাত ধরে কি হারিয়ে যাওয়া ফুটবল-উন্মাদনা ফিরে আসবে, উত্তর দেবে সময়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন