রঙিন বুদ্ধ। রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।
দীপাবলিতে রঙ্গোলি ও ইল্লু (ইলিউমিনেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ) উৎসবের চেনা ছন্দে মাতল খড়্গপুর আইআইটি।
রবিবার, দীপাবলির সন্ধ্যায় আইআইটির স্কলার্স অ্যাভিনিউতে আলোর এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতিবারের মতোই উদ্যোক্তা আইআইটির জিমখানা। গোটা প্রতিষ্ঠানের আলো নিভিয়ে হস্টেলগুলিতে (হল) হাজার-হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে প্রযুক্তির পড়ুয়াদের হাতে রঙে-প্রদীপে উদ্ভাসিত হয় উৎসব। আলোর রূপ-রেখায় রাম-রাবণের যুদ্ধ থেকে শাস্ত্রীয় নৃত্য ভঙ্গিমা, এমনকী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ভাবনাও বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।
দেশের সনাতনী চিত্রকলাকে ফুটিয়ে তুলতেই ১৯৮১ সালে আইআইটিতে প্রথম চালু হয়েছিল রঙ্গোলি উৎসব। কর্নাটকের বাসিন্দারা হলুদ, সিঁদুর-সহ নানা রঙে মাঝেতে আলপনার মতো যে চিত্রকলা শুরু করেছিলেন, সেই ‘রঙ্গভালি’ থেকেই এই রঙ্গোলির আবির্ভাব। এই লোকচিত্র অন্ধ্রপ্রদেশে মুগ্গু, তামিলনাড়ুতে কোল্লাম ও কেরলে কোলাম নামে প্রচলিত। ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, গুজরাতেও এই চিত্রকলা প্রচলিত রয়েছে। নানা প্রদেশের সেই শিল্প ভাবনা এক জায়গায় করার লক্ষ্য নিয়েই আইআইটিতে রঙ্গোলি উৎসবের সূচনা। পরে উৎসবের জাঁক বাড়াতে চালু হয় ইল্লু। মূলত বাঁশের চাটাই বা খাঁচা (গ্রিড) তৈরি করে তার উপরে সমান্তরালভাবে প্রদীপ বসিয়ে এই ইল্লু বানানো হয়। রাধাকৃষ্ণণ হলের আবাসিক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌভিক ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের হলেই একমাত্র ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে চাটাই বানানো হয়েছে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছোট ছবিকে বিশালাকার করে ফোটানো হয়েছে’’
একসময়ে এই প্রতিযোগিতায় সেরাকে এক হাঁড়ি রসগোল্লা পুরস্কার দেওয়া হত। তবে ২০১৩ সাল থেকে প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। তাতে উৎসাহে ভাটা পড়ে। তাই এ বার থেকে ফের প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ২১টি হলের পড়ুয়ারা সামিল হয়েছে তাতে। রাধাকৃষ্ণান হলের আবাসিক ধাতুবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র দেবাঞ্জন নায়েক বলছিলেন, “এ বার প্রতিযোগিতা হবে শুনে সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’’ সরোজিনী নায়ডু হলের আবাসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সোনাল প্রিয়ারও বক্তব্য, “প্রতিযোগিতার জন্যই অনেক খেটেছি।’’ জিমখানার সভাপতি গণিত বিভাগের অধ্যাপক সোমেশ কুমার জানালেন, দেশের মধ্যে একমাত্র খড়্গপুর আইআইটিতেই এই উৎসব হয়। ঐতিহ্য বজায় রেখেই এ বারও প্রথম তিন স্থানাধিকারী পাবে রসগোল্লার হাঁড়ি।