গত মাসে গড়বেতায় এক গোলমালে জখম হন বেশ কয়েকজন। সে দিন আসমা বিবি নামে এক মহিলার মাথায় গুরুতর চোট লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরিজনদের দাবি, তাঁর রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে রক্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। বদলে ‘রেফার’ করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
অথচ গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে রক্ত সংরক্ষণের আলাদা বিভাগ থাকার কথা। এক সময় তা চালুও হয়েছিল। কিন্তু এখন বন্ধ।
কেন? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, কর্মীর অভাবে ওই ইউনিট চালু রাখা সম্ভব হয়নি। যে মেডিক্যাল অফিসার (এমও) এখানে ছিলেন, তাঁর বদলি হয়েছে। নতুন এমও আসেননি।
শুধু গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরে আরও পাঁচটি ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ কর্মীর অভাবে চালু করা যায়নি। শুধু মেডিক্যাল অফিসার (এমও) বা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি) নন, প্রয়োজনীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সাফাই কর্মীর বন্দোবস্ত হয়নি। সমস্যা মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও। তাঁর কথায়, “কর্মীর সমস্যা রয়েছে। তাই রক্তের বিভাগগুলো এখনই চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ন্যূনতম যে সব পরিকাঠামো জরুরি, সেগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।’’
অনেক সময় সঙ্কটজনক রোগীকেও প্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া যায় না। পরিস্থিতি দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৮টি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয় বছর কয়েক আগে। এতদিনে মাত্র ২টি গ্রামীণ হাসপাতালে এই বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। চন্দ্রকোনা এবং বেলদায়। ডেবরা, সবং, নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি, গোপীবল্লভপুর, বেলপাহাড়ি এবং গড়বেতায় কবে রক্ত সংরক্ষণের এই বিভাগ চালু হবে, তার সদুত্তর নেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।
অথচ, এই বিভাগগুলো চালু হলে শুধু রক্তের জন্য আর সঙ্কটজনক রোগীদের ‘রেফার’ করতে হত না। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালও জেলা হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। আর ঘাটাল এবং খড়্গপুরে আছে মহকুমা হাসপাতাল। ৪টি মহকুমাতেই ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। তবে সেখানে চরম রক্তের সঙ্কট চেনা ছবি। আর জেলায় যেখানে ২৯টি ব্লক, ৬০ লক্ষ মানুষের বাস, সেখানে মাত্র ৪টি ব্লাড ব্যাঙ্ক যথেষ্ট নয়। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা মানছেন, “এখন সবং, পিংলা, নারায়ণগড় ও তার আশপাশের এলাকার মানুষ রক্তের জন্য খড়্গপুরে আসেন। খড়্গপুরে রক্ত না পেলে মেদিনীপুরে এসে খোঁজ করেন। সবংয়ে ওই ইউনিট চালু হলে মানুষকে আর খড়্গপুর-মেদিনীপুরে আসতে হবে না।’’
অথচ গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত সংরক্ষণ বিভাগে প্রতিটি গ্রুপের অন্তত দুই ইউনিট (২ বোতল) করে রক্ত থাকার কথা। থাকার কথা একজন করে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি) এবং মেডিক্যাল অফিসার (এমও)। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, যে ৬টি জায়গায় রক্ত সংরক্ষণ বিভাগ চালু হয়নি, তার মধ্যে ৪টির ক্ষেত্রে আবার ড্রাগ কন্ট্রোলের লাইসেন্স মেলেনি। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তার অবশ্য আশ্বাস, “লাইসেন্সের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলে আবেদন করা হয়েছে। ওরা পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেবে। আশা করি, খুব একটা সমস্যা
হবে না।’’