ছুটিতে রয়েছেন হাসপাতালের একমাত্র ইএনটি (নাক-কান-গলা) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে ইএনটি-র বহির্বিভাগ বন্ধ। ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের একমাত্র রেডিওলজিস্টও ছুটিতে থাকায় বন্ধ ছিল ইউএসজি পরিষেবাও। পরে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে রেডিওলজিস্ট এনে ঝাড়গ্রামে ইউএসজি করা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগে পরিষেবার এমন হাল নিয়ে অস্বস্তিতে স্বাস্থ্য দফতর।
ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে আগে দু’জন ইএনটি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বদলি হয়ে গিয়েছেন। রয়েছেন মাত্র একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ তপনকুমার ভৌমিক। পর্যাপ্ত চিকিত্সক না থাকায় ইএনটি-র বহির্বিভাগ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার খোলা থাকে। কিন্তু তপনবাবু ছুটিতে যাওয়ায় ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ বহির্বিভাগ। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বোর্ডে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, চিকিত্সক ছুটিতে থাকায় ওই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দিনগুলিতে বহির্বিভাগের নাক-কান-গলা বিভাগ বন্ধ থাকবে। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা।
বেলপাহাড়ি থেকে কানের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন সুন্দরী মাণ্ডি। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় চিকিৎসক না দেখিয়েই তাঁকে ফিরে যেতে হল। তিনি বলেন, “শুক্রবার যে ডাক্তারবাবু বসবেন না সেটা হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম। সঙ্গে বেশি টাকা নেই। তাই প্রাইভেট চেম্বারেও ডাক্তার দেখাতে পারলাম না।” পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চাকুলিয়ার মোহন সিংহ বলেন, ভিন্ রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভাল পরিষেবা পাওয়ার আশায় এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তারই নেই।”
শুধু তাই নয়, হাসপাতালের একমাত্র রেডিওলজিস্ট ছুটি নিয়েছেন বলে ২ থেকে ১০ অক্টোবর ইউএসজি পরিবেষা বন্ধ রাখারও নোটিস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ২-৪ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে ইউএসজি হয়নি। গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে রেডিওলজিস্ট এনে গত বৃহস্পতিবার থেকে ফের জেলা হাসপাতালে ইউএসজি করা শুরু হয়েছে। তবে রেডিওলজিস্ট না থাকার দরুণ বহু পরীক্ষা বকেয়া পড়ে থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
রোগীর পরিজন দীনবন্ধু নায়েক, স্বপন জানা, রথুলাল আহিরদের কথায়, ‘‘এমনিতেই বহির্বিভাগে নাম লেখানোর বেশ কয়েকদিন পরে ইউএসজি করানো হয়। কিন্তু চিকিত্সাধীন রোগীদের ক্ষেত্রে সে দিনই ইউএসজি পরিষেবা পাওয়ার কথা। রেডিওলজিস্ট না থাকায় ঝক্কি এড়াতে ভরসা সেই বাইরের নির্ণয়কেন্দ্র।’’ ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাঝি বলেন, “আরও একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করা হয়েছে। ইউএসজি বিভাগ চালু রাখার জন্য বহস্পতিবার থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।” হাসপাতালের একাংশ চিকিত্সক ও কর্মীর বক্তব্য, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে হাজার দেড়েক রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগে ভর্তি হন দৈনিক গড়ে দু’শো জন। সকলেরই ছুটি প্রয়োজন। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে চিকিত্সকরা ছুটি নিলে বিকল্প ভাবনাটা কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।