এ-ওয়ান স্টেশনেও যাত্রীর ঠাঁই মেঝেতে

বিশাখাপত্তনম যাবেন বলে দুপুরে দেওঘর থেকে খড়্গপুর পৌঁছেছিলেন দু’ভাই পাপ্পু ও দিলীপ ব্রহ্মাণী। ট্রেন সেই রাত ১০টায়।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
Share:

বিশাখাপত্তনম যাবেন বলে দুপুরে দেওঘর থেকে খড়্গপুর পৌঁছেছিলেন দু’ভাই পাপ্পু ও দিলীপ ব্রহ্মাণী। ট্রেন সেই রাত ১০টায়। অগত্যা স্টেশনেই অপেক্ষা। কিন্তু তাঁরা অপেক্ষা করবেন কোথায়! টিকিট কাউন্টারের কাছে তো বিশ্রামাগার নেই। শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে অন্য যাত্রীর মতো টিকিট কাউন্টারের সামনে মেঝেয় শুয়ে পড়লেন দু’ভাই।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ ‘এ-ওয়ান’ ক্যাটাগরির স্টেশন খড়্গপুর। সকাল থেকে রাত খড়্গপুর স্টেশনের বোগদা সংলগ্ন টিকিট কাউন্টারের সামনে একাংশ যাত্রীর এ ভাবে শুয়ে থাকার দৃশ্য পথচলতি সকলেরই চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কাউন্টারের সামনে শুয়ে-বসে থাকা মানুষের সংখ্যাটাও বাড়ে। টিকিট কাটতে গিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। খড়্গপুর স্টেশনে সাধারণ যাত্রী ও তাঁদের পরিজনেদের জন্য টিকিট কাউন্টার সংলগ্ন কোনও বিশ্রামাগার না থাকাতেই এই দুর্ভোগ। এমনকী টিকিট কাউন্টারের কাছে চার-পাঁচটির বেশি চেয়ার নেই। তাই ট্রেনের অপেক্ষায় মেঝেই ভরসা।

এ-ওয়ান স্টেশনের তকমা পাওয়া খড়্গপুরে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে লিফট, চলমান সিঁড়ি, ফ্রি ওয়াই-ফাই, সিসিটিভি—এমন নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগারও রয়েছে, তবে সেটি ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে। সেখানে টিকিট ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার নেই। পরিজন-বন্ধুকে ট্রেনে তুলতে বা নিয়ে যেতে এসেও অনেকে স্টেশনে অপেক্ষা করেন। তাঁরা টিকিট কাউন্টারের আশপাশেই বসে-শুয়ে অপেক্ষা করেন।

Advertisement

আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল, অমরাবতী এক্সপ্রেস, বোম্বে মেলের মতো যে সব দূরপাল্লার ট্রেন রাতে খড়্গপুরে আসে, তার যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। অনেকে আবার টিকিট কেটেও আসনের অভাবে ট্রেনে উঠতে না পেরে টিকিট বাতিল করেন। রেলের নিয়ম অনুযায়ী টিকিট কাটার দু’ঘণ্টার মধ্যে টিকিট বাতিল করতে হয়। তাই স্টেশনে আগে পৌঁছেও ট্রেন স্টেশনে আসার ঠিক আগে অনেক যাত্রী টিকিট কাটেন। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে থাকা বিশ্রামাগার তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না।

এই অবস্থায় যাত্রী-ক্ষোভ বাড়ছে। পাপ্পু ও দিলীপ ব্রহ্মাণী বলছিলেন, “হামেশাই আমরা খড়্গপুর স্টেশন দিয়ে বিশাখাপত্তনম যাতায়াত করি। প্রতি বারই সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে বিশ্রামাগার খুব প্রয়োজন।’’ মেঝেয় শুয়ে থাকা এগরার বাসিন্দা শ্রীমন্ত গিরি ও ঝর্না গিরিদেরও বক্তব্য, “ট্রেন ছাড়ার কিছুটা আগে স্টেশনে এলে এই ভাবেই মেঝেতে অপেক্ষা করতে হয়। রেলের বিষয়টি ভাবা উচিত।’’ মেঝেতে শুয়ে থাকা যাত্রীদের কাটিয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে যাওয়া পটনার কমলেশ যাদব বলছিলেন, “খড়্গপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসি। রাতে স্টেশনে এই ভাবে যাতায়াতে বিরক্ত লাগে।’’

এ সব সমস্যা অজানা নয় রেলের পদস্থ কর্তাদের। ডিআরএম খড়্গপুর রাজকুমার মঙ্গলা বলেন, “১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে বিশ্রামাগার রয়েছে। কেউ চাইলে প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেটে সেখানে যেতেই পারেন। আর টিকিট কাউন্টারের সামনে জায়গা না থাকায় ওখানে বিশ্রামাগার বানানো যাচ্ছে না। টিকিট কাউন্টারের বাইরে আমরা বড় ছাউনি তৈরি করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন