বিধাননগরে প্রতিবাদে সামিল এলাকার কাউন্সিলরও

খেলার মাঠে নেশার আসর, সরব মহিলারা

কয়েক ফুট অন্তর মাঠের চারদিকে গোল করে বসে আড্ডায় মশগুল অল্পবয়সী ছেলেছোকরাদের দল। তারা উঠে যেতে দেখা গেল, মাঠে পড়ে বিয়ারের বোতল! কেউ আবার মাঠের আলো-আঁধারিতে পাশে বান্ধবী নিয়ে গল্পে মজে। অনেক সময়ই তাদের আচরণ শালীনতার মাত্রা ছাড়ায় বলে অভিযোগ। কিছু যুবক আবার মাঠে রাখা মোটরবাইকে জটলা করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

শুক্রবার রাত। বিধাননগর মাঠে তখন বচসা চলছে। রয়েছেন ৫ নম্বর কাউন্সিলর মৌ রায় (মাঝে)। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

কয়েক ফুট অন্তর মাঠের চারদিকে গোল করে বসে আড্ডায় মশগুল অল্পবয়সী ছেলেছোকরাদের দল। তারা উঠে যেতে দেখা গেল, মাঠে পড়ে বিয়ারের বোতল!

Advertisement

কেউ আবার মাঠের আলো-আঁধারিতে পাশে বান্ধবী নিয়ে গল্পে মজে। অনেক সময়ই তাদের আচরণ শালীনতার মাত্রা ছাড়ায় বলে অভিযোগ। কিছু যুবক আবার মাঠে রাখা মোটরবাইকে জটলা করছে। সেই দল থেকে মাঠে বেড়াতে আসা নানা বয়সী মেয়েদের উদ্দেশে উড়ে আসছে অশ্লীল মন্তব্য। মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়ে-বউরাও কু-কথার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

মেদিনীপুর শহরের মাঠগুলির এমনই দশা। যে মাঠে পাড়ার কচিকাঁচাদের খেলে বেড়ানোর কথা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের খোলা হাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার কথা, সেখানেই জমছে নেশার আসর। পুলিশে জানালে দু’-একবার তল্লাশি অভিযান হয়। তারপর কিছু দিন সমস্যায় দাঁড়ি পড়ে। কিন্তু সময় গড়ালে ফের যে-কে সেই।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিধাননগর মাঠেও নেশার আসর জমেছিল বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে সাড়ে ৭টা নাগাদ পাড়ার মহিলাদের নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মৌ রায় সেখানে হাজির হন। কাউন্সিলর মাঠে নামতেই তড়িঘড়ি আসর ভাঙে। তবে আড্ডায় থাকা কেউ কেউ রুখেও দাঁড়ান। কোনও তরুণী বলেন, ‘দাদার সঙ্গে মাঠে বসেছি।’ কারও আবার যুক্তি, ‘মাঠে কে বসবে তা কি কাউন্সিলর ঠিক করে দেবেন নাকি?’ কাউন্সিলরের অবশ্য সাফ কথা, “মাঠ খেলার জন্য। তা ছাড়া, পাড়ার অনেকে সন্ধেয় হাঁটেন, অনেকে বসে গল্পও করেন। সেই মাঠে বসে মদ্যপান, মাদক সেবন, মেয়েদের সঙ্গে অভব্যতা বরদাস্ত করা হবে না।’’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মৌদেবী পুলিশও ডাকেন। তবে ধরপাকড় করা হয়নি। ঠিক হয়েছে, সন্ধের পরে মাঠে একবার করে টহল দেবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মহিলা কাউন্সিলরের এমন পদক্ষেপে পাড়ার লোক, বিশেষ করে মহিলারা খুশি। ঘটনার সময় মেয়েকে নিয়ে মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন রিঙ্কু আদক। বললেন, “কাউন্সিলরকে বাহবা না দিয়ে পারছি না। যে ভাবে অসভ্যতা বাড়ছিল তাতে মাঠে বসা দূর, মদ্যপদের উৎপাতে পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়াও দুরূহ হয়ে উঠছিল।’’

এ তো গেল একটা মাঠের কথা। কিন্তু মেদিনীপুর শহর জুড়ে তো অনেক মাঠ। এবং সর্বত্রই সমস্যার ছবিটা কম-বেশি এক। মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের মাঠ, রবীন্দ্রনগরের মাঠ, অরবিন্দনগরের মাঠ, রাঙামাটির মাঠ, বার্জটাউনের মাঠ, তেঁতুলতলার মাঠ, শরৎপল্লির মাঠে খেলাধুলোর পাশাপাশি বয়স্ক লোকজন সান্ধ্যভ্রমণ করেন, বাচ্চাদের ঘোরাতে নিয়ে আসেন মায়েরা। অনেকে বন্ধু-পরিজনদের সঙ্গে মাঠে বসে গল্পগাছাও করেন। কিন্তু অভিযোগ, বেশিরভাগ মাঠই সন্ধের পরে মাদকাসক্ত যুবকদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে, মাঠের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ যে মিথ্যে নয়, মাঠে পড়ে থাকা মদের বোতল, নেশার সামগ্রীই তার প্রমাণ।

এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও পুরসভা কেন তৎপর হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার অবশ্য আশ্বাস, অসামাজিক কাজকর্ম ঠেকাতে এ বার থেকে শহরের প্রতিটি মাঠে সন্ধের পরে একবার করে টহল দেবে পুলিশ। আর মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘মাঠের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরই সতর্ক। মাঠে আলোও দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেউ অভব্যতা করলে তা আমরা বরদাস্ত করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন