লুডোর ছকেই রঙিন পুজোর বৃদ্ধাবাস

এক সময় পুজোর গন্ধ এলেই মন দুলে উঠত, ছিটের ফ্রক, রঙিন ফিতে, নতুন জুতো— তারপর ছেলেমেয়েদের হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া— সবই ছিল। সবই এসেছে জীবনের নানা পর্যায়ে। এখন একটা বাস আসে সপ্তমীর দিন। লাইন করে বন্ধুরা সকলে উঠে পড়েন বাসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:১০
Share:

পরবাসে: বৃদ্ধাবাসের সামনে আবাসিকরা। নিজস্ব চিত্র

পুজোর গন্ধ ভারী হয়ে গিয়েছে ওঁদের কাছে। অন্তত ষাটটি শরৎ কাটিয়ে তবে ওঁরা এসেছেন এখানে। কেউ বা ৭২, কেউ ৭৮, কেউ আবার সবে ৬৩। স্বজন বলতে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেওয়াল, আর পাশে থাকা অন্য বৃদ্ধারা।

Advertisement

এক সময় পুজোর গন্ধ এলেই মন দুলে উঠত, ছিটের ফ্রক, রঙিন ফিতে, নতুন জুতো— তারপর ছেলেমেয়েদের হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া— সবই ছিল। সবই এসেছে জীবনের নানা পর্যায়ে। এখন একটা বাস আসে সপ্তমীর দিন। লাইন করে বন্ধুরা সকলে উঠে পড়েন বাসে। তারপর ঘুরে ঘুরে দেখা দু’একটা ঠাকুর। শরীরের জোরও কমে গিয়েছে, তাই পুজোর পাঁচ দিন ভাল লাগে বৃদ্ধাশ্রমের লম্বা হল ঘরে গুনগুন আড্ডা, আর লুডোর রঙিন খোপ।

সুপ্রীতি করণ, মঞ্জু খাঁড়া, জহ্নবী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মাজিরা কেউ থাকতেন তেলিপুকুরে, কেউ হরিপুরে, কেউ দক্ষিণ কুমারপুর, কেউ আবার ব্রাহ্মণশাসনের বাসিন্দা ছিলেন। এখন সকলের একঠাঁই— বৃদ্ধাশ্রম। কাঁথির ফরিদপুর এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রয়ে রয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

এই সংগঠনের অধ্যক্ষ অশোককুমার পাল বলেন, “প্রত্যেক বছর সপ্তমীতে মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে কাঁথি এলাকার পুজো ঘুরিয়ে দেখানো হয় আবাসিকদের। পুজোর পর আমরা শারদীয়া উৎসবের আয়োজন করি।’’ সেই উৎসবে সকলেই মেতে ওঠেন যে যার মতো করে। গান, কবিতা— যে যা পারেন।

আর সব থেকে বেশি মজার লুডো প্রতিযোগিতা। বৃদ্ধাবাসের সন্ধেগুলো তো কেটে যায় ওই লুডো খেলেই। লাল, নীল, সবুজ, হলুদের ঘুঁটি, খোপে খানিকটা রঙিন হয়ে ওঠে সাদাকালো বার্ধক্য। ‘‘সারা বছর এই প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। কে কাকে হারাবো তাই ভাবি মনে মনে।’’ — বললেন জাহ্নবীদেবী।

তবে শুধু ঘরের মায়া নয়। ঘুরে বেড়ান আবাসিকরা। গত বছর পুজোয় মায়াপুর বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ বার অবশ্য পুজোর আগেই ঘোরা হয়ে গিয়েছে। গত ৬ আগস্ট দিঘা। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা হয়েছে।

তবু মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে অতীতের স্মৃতি। ছেলে, মেয়ে, বৌমা, নাতি-নাতনিদের মুখ বার ঘুরে আসে দুর্গার মুখের আদলে। ঢাকের বোল শুনলেই মনের মধ্যেও শুরু হয় তাল ঠোকা— এ বার যদি কেউ আসে বাড়ি থেকে। কখনও আসে, কখনও আসে না। সংসারে কষ্টের দিনগুলো ফের ভুলে যেতে চান ওঁরা লুডোর বোর্ডে। ‘‘ঘুঁটি সাজিয়ে সাপের মুখে ছাই দিতে চাই’’, বললেন মঞ্জু খাঁড়া।

মা দুর্গার কাছে কী প্রতিকার চান?

‘‘না, না, কিসের প্রতিকার? স্বামী, ছেলে, মেয়ে, বৌমা, নাতি, নাতনিরা যে যেখানে আছে ভাল থাকুক। ওদের সুখে রাখুক মা দুর্গা।’’ বারান্দায় বসে সমস্বরে জানিয়ে দেন
বৃদ্ধাবাসের দুর্গারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন