বাড়ির সামনেই প্রকাশ্য রাস্তায় অ্যাসিড হামলার শিকার হলেন বছর বিয়াল্লিশের এক মহিলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়। জখম মহিলার চিকিৎসা চলছে তমলুক জেলা হাসপাতালে। অ্যাসিডে তাঁর বাঁ চোখ, কাঁধ-সহ শরীরের বেশ কিছুটা ঝলসে গিয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত বছর সাতচল্লিশের নিমাই মালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার সঙ্গী আরও একজনের খোঁজ চলছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু তথ্যসূত্রও মিলেছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ময়নার ওই মহিলার সঙ্গে পেশায় গাড়ি চালক তমলুকের নিকাশি এলাকার বাসিন্দা নিমাইয়ের পরিচয় হয়েছিল কয়েকবছর আগে। মহিলার বাড়িতে যাতায়াতও ছিল নিমাইয়ের। স্বামী, ছেলে, বউমা, নাতনি নিয়ে মহিলার সংসার। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন শ্রীরামপুরে। জানা গিয়েছে, মহিলার ছেলেই নিমাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে সম্প্রতি আপত্তি জানান। এ নিয়ে মহিলার পরিবারে অশান্তি হচ্ছিল। মহিলাও নিমাইকে জানান, তিনি আর সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নন। এর
পরই আক্রোশবশত নিমাই অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত সালফিউরিক অ্যাসিডই ছুড়েছে নিমাই।
মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলা এ রাজ্যে নতুন নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পর্কের টানাপড়েনে ঝলসে যেতে হয় কিশোরী, যুবতী বা মধ্যবয়সী মহিলাদের। মেদিনীপুরের তিন জেলাতেও হামেশাই এমন ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নার মহিলা বৃহস্পতিবার সকালে তমলুকে আত্মীয় বাড়িতে এসেছিলেন। ফেরার পথে সন্ধে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে মাত্র আড়াইশো মিটার দূরে আক্রান্ত হন তিনি। অভিযোগ, উল্টো দিক থেকে মোটরসাইকেলে এসে নিমাই ও তার এক সঙ্গী মহিলার মুখ লক্ষ করে অ্যাসিড ছুড়ে পালায়। চোখ-মুখ জ্বলতে শুরু করায় স্থানীয়রা প্রথমে জল দিয়ে শুশ্রূষার চেষ্টা করেন। পরে মহিলাকে রাস্তার পাশে নিকাশি খালে নামানো হয়। ততক্ষণে তাঁর চোখ, মুখের একাংশ ঝলসে গিয়েছে। এরপর মহিলাকে ময়না ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে তমলুক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার পাশে একটি নারকেল গাছেও অ্যাসিডের দাগ। ওই গাছ থেকে কয়েক ফুট দূরে রাস্তার পাশে আগাছার মধ্যে পড়েছিল একটি প্লাস্টিকের গ্লাস। তা থেকেই অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। গ্লাসটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আক্রান্ত মহিলার বৌমা, জা-রা বলছিলেন, ‘‘অশান্তি হওয়ায় নিমাই বাড়িতে আসা বন্ধ করেছিল। কিন্তু তার শোধ যে এ ভাবে অ্যাসিড ছুড়ে নেবে বুঝতে পারিনি।’’