বিপদের আশঙ্কা

ঝুলছে ট্রান্সফর্মারের বিদ্যুতের তার

বাতি জ্বলে না, অথচ ইলেকট্রিক বক্স থেকে বেরিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার। অনেক জায়গায় আবার বিদ্যুতের খুঁটির বোর্ড খোলাই রয়েছে। অসতর্ক হয়ে কেউ সেখানে হাত দিলেই ঘটতে পারে বিপদ। নজর নেই পুরসভার।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৪
Share:

খরিদায় ট্রান্সফর্মারের বক্স খোলা। বিপদের আশঙ্কা।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

বাতি জ্বলে না, অথচ ইলেকট্রিক বক্স থেকে বেরিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার। অনেক জায়গায় আবার বিদ্যুতের খুঁটির বোর্ড খোলাই রয়েছে। অসতর্ক হয়ে কেউ সেখানে হাত দিলেই ঘটতে পারে বিপদ। নজর নেই পুরসভার।

Advertisement

দিন কয়েক আগে কলকাতায় ত্রিফলা বাতির তারে হাত লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। তারপরেও যে হুঁশ ফেরেনি খড়্গপুরের রাস্তায় ঘুরলেই তার প্রমাণ মেলে। খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা সুশীল প্রসাদ বলেন, ‘‘যে কোনও সময় পাড়ার বাচ্চারা খেলার ছলে বাতিস্তম্ভের খোলা বক্সে হাত দিতে পারে। কোনও বিপদ ঘটলে তার দায় কে নেবে। তাই পুরসভার সজাগ হওয়া উচিত।”

শহরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, ছোটট্যাংরা, মালঞ্চ এলাকায় পথবাতির তারের জয়েনিং বাক্সের পাল্লা খোলা থাকে। শহর সাজাতে রাস্তার ধারে এলইডি আলো লাগানো হয়েছে। অথচ এলাকা ঘুরে দেখা গেল, মালঞ্চর মতো শহরের জনবহুল জায়গাতেও এলইডি আলোর জয়েনিং বক্সের তার খোলা। মালঞ্চ যুবসঙ্ঘ এলাকা, জলট্যাঙ্ক, বালাজি মন্দির পল্লি, খরিদা, সুভাষপল্লি, ইন্দা এলাকার ট্রান্সফর্মার বক্স খোলা পড়ে।

Advertisement

বেরিয়ে রয়েছে হাই ভোল্টেজ তার। খড়্গপুরের মালঞ্চতে।

মালঞ্চ যুবসঙ্ঘ এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া সেন বলেন, “এলাকায় দীর্ঘদিন ট্রান্সফর্মার খোলা রয়েছে। কাকে বলব জানিনা। সবাই দেখছে। কিন্তু বিপদ যে দিন আসবে সেই দিনই হইচই হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার ছোট ছেলে থেকে প্রবীণ মানুষ যে কেউ ট্রান্সফর্মারে হাত দিলে বিপদ ঘটতে পারে।”

অনেক জায়গায় বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স থেকে হুকিংও করা হয় বলে শহরের একাংশ বাসিন্দার অভিযোগ। মালঞ্চয় রাস্তার দু’ধারের অনেক দোকানে এ ভাবেই বিদ্যুৎ চুরি করে আলো জ্বালানো হয় বলে অভিযোগ। ট্রান্সফর্মার থেকেও চলে হুকিং। মালঞ্চর লালবাংলোর এক বাসিন্দার অভিযোগ, “এলাকার কয়েজন দোকানদারকে দেখি, সন্ধে হলেই ওই খুঁটির জয়েনিং বাক্স থেকে বিদ্যুতের তার টানা হচ্ছে। কিছু বলতে গেলে অশান্তি হবে। তাই চুপচাপ থাকি। পুরসভা সব জেনেও চোখ বন্ধ করে রাখলে আমরা আর কী করব।”

খড়্গপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বর্ষায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে। তার উপরে ট্রান্সফর্মারের বক্স খোলাও পড়ে থাকে। কোনও ভাবে বৃষ্টির সময় বিপদ হবে, কী হবে কেউ জানে না।’’

শহরের অধিকাংশ ট্রান্সফর্মারে ফিউজ বক্স না থাকায় বেরিয়ে থাকে হাই ভোল্টেজ তার। আবার অনেক জায়গায় ট্রান্সফর্মারে ফিউজ বক্স থাকলেও তা খোলা থাকে। দমকল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ওসি শহরের ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা শতদল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “শহরের বহু বাতিস্তম্ভে খোলা জয়েনিং বক্স বক্স থেকে তার বেরিয়ে থাকে। অনেক ট্রান্সফর্মার থেকে তার ঝুলে থাকতেও দেখা যায়। তারে কারও হাত লাগলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। পুরসভা ও বিদ্যুৎ দফতরের বিষয়টি দেখা উচিত।”

বাতিস্তম্ভের তারের জয়েনিং বক্স খোলা। ঝাপেটাপুরে।

এ বিষয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “মালঞ্চয় জয়েনিং বক্স থেকে বিদ্যুৎ চুরি করার খবর পেয়েছি। ইতিমধ্যেই পথবাতি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে ওই বক্স সিল করে দিতে বলেছি। বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে ট্রান্সফর্মারের বক্স বন্ধ করতে বলব।” ট্রান্সফর্মারের বক্স খোলা থাকা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের খড়্গপুরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “অধিকাংশ এলাকায় আমরা ট্রান্সফর্মারের বক্স লাগানো হয়েছে। এরপরেও কোথাও বক্স না থাকা বা বক্স খোলা থাকার কথা জানানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন