দায় নিচ্ছে না রেলশহরের পুরসভা

ভিতরে-বাইরে জঞ্জাল, শিকেয় স্কুলের সাফাই

পরিণাম— স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাঘর সংলগ্ন এলাকা, খেলার মাঠ, শৌচাগারে আবর্জনা ও জমা জলে বাড়ছে। স্কুলের বাইরের নর্দমা ও ফাঁকা জমিতেও আবর্জনা জমছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

অপরিচ্ছন্ন: সিলভার জুবিলি স্কুলের সামনে জমেছে জঞ্জাল। নিজস্ব চিত্র

স্কুল চত্বর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পুরসভার নালা। চারপাশে জমে আবর্জনা। পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, সকলকেই সহ্য করতে হচ্ছে মশার উপদ্রব। অবশ্য পুরসভা বলছে, স্কুল চত্বরে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব তাদের নয়। তাই মশা রুখতে সাধ্যমতো পরিচ্ছন্নতায় জোর দিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্কুলের চারপাশে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশার হাত থেকে নিস্তার নেই।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি খড়্গপুর শহরে। জেলায় চারশো ছাড়িয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্ত। তার মধ্যে শুধুমাত্র খড়্গপুর শহরেই ১৯৩জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। অথচ এই শহরের কোনও স্কুলেই পুরসভার পক্ষ থেকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। পরিণাম— স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাঘর সংলগ্ন এলাকা, খেলার মাঠ, শৌচাগারে আবর্জনা ও জমা জলে বাড়ছে। স্কুলের বাইরের নর্দমা ও ফাঁকা জমিতেও আবর্জনা জমছে।

পরিস্থিতি দেখে ডেঙ্গি মোকাবিলায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরসভাকেও উদ্যোগী হতে বলছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “আমরা অনেক আগেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় স্কুলগুলিতে নজর দেওয়া কথা বলেছি। এ ক্ষেত্রে পুরসভা ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিয়ে স্কুল চত্বর ও বাইরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।”

Advertisement

খড়্গপুরে অবশ্য সে কাজ হচ্ছে না। ইন্দা, সুভাষপল্লি, কৌশল্যা, নিমপুরা এলাকার স্কুলগুলিতে সমস্যা সব থেকে বেশি। ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে পুরসভার মহানালা। পুরসভা তা পরিষ্কার করেনি। সে কথা পুর-কর্তৃপক্ষ ও মহকুমাশাসককে বারবার জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সুফল মেলেনি। দিন কয়েক আগে শোরগোল হওয়ায় কাউন্সিলর ও মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে নর্দমা সাফাই হয়েছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, “মহকুমাশাসক তো এসে বলে গিয়েছিলেন নর্দমা পুরসভা ঢেকে দেবে। কিন্তু ওই দিনের পর আর কোনও পুরকর্মী স্কুলে আসেনি। নর্দমা সাফাই হয়নি, মশা মারার তেলও দেওয়া হয়নি। আমরাই
ব্লিচিং দিয়েছি।”

একই অভিযোগ ইন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। স্কুলের মাঠ দিয়ে চলে যাওয়া নর্দমায় আবর্জনা পড়ে নিকাশির পথ রুদ্ধ হয়েছে। সেখানেই বাড়ছে মশার লার্ভা। কৌশল্যা এলাকায় সিলভার জুবিলি হাইস্কুলের চারপাশেও আবর্জনার পাহাড়। স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাঘর ও খাওয়ার জায়গার ধারেই জমে রয়েছে জঞ্জাল। সহকারী প্রধানশিক্ষক প্রভাস ভট্টাচার্য বলেন, “স্কুল চত্বর আমরা যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাইরের আবর্জনা তো অন্তত পুরসভার পরিষ্কার করা উচিত। স্কুলে মশা মারার তেল দেওয়াও জরুরি।”

পুরসভার সাহায্য না পাওয়ায় বহু স্কুল কর্তৃপক্ষই বিরক্ত। সুভাষপল্লি জনকল্যাণ বিদ্যায়তনের পিছনের নর্দমার ধারে আবর্জনার আর জমা জল নদরে এল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মদন নাগ বললেন, “স্থানীয় কাউন্সিলরকে বহুবার বলেও সুফল পাইনি। মশা তো ব্লিচিংয়ে মরে না। কিন্তু আমাদের মশা মারার তেল কেনার সাধ্য নেই। তাই ব্লিচিংই ছড়াচ্ছি।”

পুরসভা অবশ্য স্কুল সাফাইয়ের দায়িত্ব দিতে নারাজ। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের যুক্তি, “স্কুল চত্বর পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের নয়। স্কুলের বাইরের অংশ শহরের অন্য এলাকার মতোই পরিষ্কার করার কাজ হচ্ছে। তারপরেও যদি কোনও স্কুল আমাদের আবেদন করে, তখন সাফাইয়ের ব্যবস্থা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন