প্রতীকী ছবি।
একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন না!
আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ চাইছেন, পরিবারের কাউকে একবার অন্তত সুযোগ দেওয়া হোক। মেদিনীপুর গ্রামীণের পাঁচখুরির এক তৃণমূলকর্মী যেমন দলের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, হয় তাঁর মা, নয় তো তাঁর স্ত্রীকে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা হোক। মেদিনীপুরের এক নেতার কাছে তাঁর অনুরোধ, “আমার ছেড়ে যাওয়া আসনে হয় আমার মা-কে টিকিট দিন, নয় তো আপনার বৌমাকে দিন!” পাঁচখুরির ওই কর্মী গতবার পঞ্চায়েতে জিতেছিলেন। এ বার নিজের পুরনো আসনে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, ওই আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।
শুধু মেদিনীপুর গ্রামীণ নয়, গড়বেতা, কেশপুর, শালবনি-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন শয়ে শয়ে আবেদন-অনুরোধ এসেছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি মানছেন, “অনেকেই চাইছেন, মহিলা সংরক্ষিত আসনে তাঁর পরিবারের একজনকে দাঁড় করাতে।” অজিতবাবু বলেন, “যোগ্যদের সেই সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। এমন অনেক আসন রয়েছে, যেখানে কারও স্ত্রী প্রার্থী হচ্ছেন, কারও মা কিংবা বোন প্রার্থী হচ্ছেন। তবে প্রার্থী যোগ্য কি না, তা আগে দেখা নেওয়া হচ্ছে।”
তড়িঘড়ি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে নাজেহাল অবস্থা সব দলেরই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতার স্বীকারোক্তি, “হঠাৎ নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় সমস্ত দলই সমস্যায় পড়েছে। আমরাও! সমস্যা বেশি সংরক্ষিত আসন নিয়েই।” তিনি মানছেন, “মহিলা সংরক্ষণের গেরোয় দলের বহু নির্বাচিত সদস্য এ বার তাঁদের পুরনো আসনে প্রার্থী হতে পারছেন না। বদলে পরিবারের কোনও এক মহিলা সদস্যকে প্রার্থী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।”
জেলার ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৫টি পঞ্চায়েত প্রধানের পদ মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। ২৭টি উপপ্রধানের পদ মহিলা সংরক্ষিত।
মা-বৌমার জন্য দরবার চলছে। জেলা নেতারা কিছু অনুরোধ রাখছেন। কিছু অনুরোধ বাতিলও হচ্ছে।
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “রাজনৈতিক ভাবে একটা রাজনৈতিক দল সকলকে কখনও সন্তুষ্ট করতে পারে না। অনেকের অনেক ইচ্ছে রয়েছে। মনের মধ্যে দুঃখ থাকতে পারে, যন্ত্রণা থাকতে পারে, তাও যাঁরা দলের পতাকা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, তাঁরাই দলের প্রকৃত কর্মী।” কিন্তু মা-বৌমার আবেদন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট দলীয় কর্মী সক্রিয় ভাবে কাজ করবেন তো! ভোট ব্যালটে এর প্রভাব পড়বে না তো! আশঙ্কা থাকছে। তবে থাকছে আশাও। কারণ, তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, নীচুস্তরে অনেক নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের কাউকে প্রার্থী করা না হলে আখেরে লাভবান হবে দলই।