প্রাণ হাতে পারাপার

এক যুগেরও বেশি সময় হল পুরসভা হয়েছে এই শহর। কিন্তু নগরায়ণের ছাপ নেই। শহর বাড়ছে অপরিকল্পিতভাবে। স্টেশনে ভরসা একটাই ফুটব্রিজ। আজ প্রথম কিস্তি।

Advertisement

বরুণ দে

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:২৯
Share:

বিপদ-লাইন: এ ভাবেই রেললাইন পেরিয়ে নিত্যদিনের যাতায়াত পাঁশকুড়া স্টেশনে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

এক যুগেরও বেশি সময় হল পুরসভা হয়েছে এই শহর। কিন্তু নগরায়ণের ছাপ নেই। শহর বাড়ছে অপরিকল্পিতভাবে। স্টেশনে ভরসা একটাই ফুটব্রিজ। আজ প্রথম কিস্তি।

Advertisement

মাস চারেক আগের ঘটনা। পাঁশকুড়া স্টেশনের সামনে রেললাইন পেরোতে গিয়ে বেঘোরে মৃত্যু হয়েছিল বাবা-মেয়ের। রেল পুলিশের অনুমান, ট্রেনের ধাক্কাই সেই মৃত্যুর কারণ। রেললাইন পেরোতে গিয়ে মৃত্যু নতুন নয়। হোঁচট খেয়ে লাইনে পড়ে জখম হন নিত্যযাত্রীরা। তারপরও ঘুম ভাঙেনি রেলের!

এমন পরিস্থিতির পরও দ্বিতীয় ফুটব্রিজ তৈরি হল না পাঁশকুড়া স্টেশনে। অথচ, স্টেশনের পশ্চিমদিকে এই ব্রিজের দাবি দীর্ঘদিনের।

Advertisement

সমস্যার কথা মানছেন রেল কর্তৃপক্ষও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে (হাওড়া-জকপুর) প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অজয় দলুইয়ের দাবি, ‘‘দ্বিতীয় ফুটব্রিজের জন্য রেলকে বারবার চিঠি দিয়েছি। একবার রেলের পক্ষ থেকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য কিছু হয়নি।”

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাইন পেরোবেন না-বিজ্ঞাপন দিয়ে এমনই উপদেশ দেয় রেল। পাঁশকুড়ায় অবশ্য ঝুঁকি নিয়ে লাইন পেরোনোটা নিত্যদিনের ছবি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন পাঁশকুড়া। এই স্টেশন দিয়ে রোজ প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। পাঁশকুড়া দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো ট্রেন চলাচল করে। শুধু পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, মেচগ্রাম নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, ডেবরা প্রভৃতি এলাকার মানুষও এখানে ট্রেন ধরতে আসেন। স্থানীয়দের মতে, রেল ও সড়কপথে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার জন্য পাঁশকুড়া স্টেশন পূর্বের র বাসিন্দাদের কাছে তো বটেই, পাশের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দাদের একাংশের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।

এ হেন পাঁশকুড়া স্টেশনে ছ’টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এক থেকে ছয়-প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম পূর্ব দিকের ফুটব্রিজের মাধ্যমে যুক্ত। তবে স্টেশনের পূর্ব দিকের থেকে পশ্চিম দিকটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিম দিকের একদিকে রয়েছে কনকমোড়। এই মোড়ের কাছ দিয়েই চলে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। রয়েছে পাঁশকুড়া কলেজ। অন্য দিকে রয়েছে নতুন বাসস্ট্যান্ডও। ফলে পশ্চিমদিকে ফুটব্রিজ না থাকায় নিত্যযাত্রীদের অনেকেই লাইন পেরিয়ে যাতায়াত করেন। কেউ লাইন পেরোতে না চাইলে তাঁকে অনেকটা ঘুরে উল্টো দিকের প্ল্যাটফর্মে আসতে হয়।

নিত্য যাত্রীদের অভিযোগ ঠিক সেখানেই। পাঁশকুড়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শম্পা মাইতির কথায়, “বেশ কিছু এলাকার মানুষ এই স্টেশনের ওপর নির্ভরশীল। এত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের একটা ফুটব্রিজ থাকাটা দুর্ভোগের তো বটেই। রেলের এ বিষয়ে ভাবা উচিত।” একই মত স্থানীয় বাসিন্দা শুভঙ্কর জানার। তাঁর কথায়, “পশ্চিমদিকে ফুটব্রিজ না থাকায় বাধ্য হয়ে লাইন পেরোতে হয়। জানি ঝুঁকির। কিছু করার নেই।” নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, লাইনে মালগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আর ওই মালগাড়ির নীচ দিয়ে যেতে গিয়ে বিপদ হয়।

রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশনের পশ্চিম দিকের জবরদখল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রিজ তৈরিতে। খড়্গপুর ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারির কথায়, “পাঁশকুড়ায় ফুটব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সমীক্ষাও হয়েছে। আশা করছি, জবরদখল সরিয়ে শীঘ্রই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন