রক্তশূন্য

মেদিনীপুর ব্লাডব্যাঙ্কের মধ্যেই বুধবার দুপুরে ঘোরাফেরা করছিলেন শম্ভুনাথ চক্রবর্তী। বেশ কয়েকবার ব্লাডব্যাঙ্কের ডিসপ্লে বোর্ডের দিকে তাকালেন তিনি। ডিসপ্লে বোর্ড বন্ধ। জানার উপায় নেই, ব্লাডব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের কত রক্ত মজুত রয়েছে।

Advertisement

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

মেদিনীপুর ব্লাডব্যাঙ্কের মধ্যেই বুধবার দুপুরে ঘোরাফেরা করছিলেন শম্ভুনাথ চক্রবর্তী। বেশ কয়েকবার ব্লাডব্যাঙ্কের ডিসপ্লে বোর্ডের দিকে তাকালেন তিনি। ডিসপ্লে বোর্ড বন্ধ। জানার উপায় নেই, ব্লাডব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের কত রক্ত মজুত রয়েছে।

Advertisement

এ দিন সকালে পথ দুর্ঘটনায় জখম হন শম্ভুনাথবাবুর এক আত্মীয়। জখম আত্মীয়কে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রক্ত প্রয়োজন। লাইনে দাঁড়িয়েই তিনি বলছিলেন, ‘‘দেখি এক ইউনিট রক্ত পাই কি না। না পেলে যে কী হবে!”

অন্য আর এক রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা থাকলে আগেই বুঝতে পারতাম কোন কোন গ্রুপের রক্ত ব্যাঙ্কে রয়েছে। এখন এই লাইনে দাঁড়িয়ে শেষে দেখব হয়তো আমার যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন সেটাই ব্যাঙ্কে নেই। এই মুহূর্তে সময়ের কত দাম, এটা এরা কবে বুঝবে জানিনা।’’

Advertisement

চিত্রটা কমবেশি একই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কেও। বুধবার হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ডিসপ্লে বোর্ডে দেখা যায়, ৯ এপ্রিলের পর থেকে রক্ত সঞ্চয়ের তালিকা পরিবর্তন করা হয়নি। বুধবার ডিসপ্লে বোর্ডে দেখাচ্ছিল, ব্লাডব্যাঙ্কে ‘বি’ ও ‘ও’ পজেটিভ ছাড়া কোনও গ্রুপের রক্তই নেই। যদিও কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ব্যাঙ্কে ‘বি’ নেগেটিভ, ‘ও’ নেগেটিভ, ‘এবি’ পজেটিভ ও নেগেটিভ গ্রুপের একটি করে রক্তের পাউচ মজুত রয়েছে। ‘এ’ নেগেটিভ গ্রুপের কোনও রক্তই নেই। ব্লাডব্যাঙ্কের বোর্ড অকেজো থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক রোগীর পরিজনেরা।

এক রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘ব্লাডব্যাঙ্কের বোর্ড দেখেই অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ ওই ব্যক্তির যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন তা হয়তো ব্লাডব্যাঙ্কে মজুত রয়েছে। সবটাই আসলে ছেলেখেলা।’’ সমস্যার কথা মানছে স্বাস্থ্য দফতরও। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এ বার শিবিরের সংখ্যা কমেছে। সব হাসপাতালে শিবিরের কথা
বলা হয়েছে।”

মেদিনীপুর মেডিক্যাল সূত্রে খবর, এখানে গড়ে যেখানে দিনে ৭০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন, সেখানে সংগ্রহ হয় গড়ে ৪০ ইউনিট রক্ত। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৩০ ইউনিট রক্তের ঘাটতি থাকে। এই অবস্থায় কখনও কখনও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। এ বার গরম পড়তেই জেলা জুড়ে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল থেকে মেদিনীপুর, খড়্গপুর- সব হাসপাতালেই কমবেশি রক্তের সঙ্কট চলছে। রক্তের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হলে তাঁদেরও সমস্যায়
পড়তে হয়।

রক্ত সঙ্কটের কারণ কী?

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গরমে এমনিতেই শিবির কম হয়। এই সময় রক্তদানে মানুষের তেমন উৎসাহ থাকে না। অন্য দিকে, ভোট থাকায় শিবিরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। মেডিক্যালের এক কর্তাও বলেন, “মাস কয়েক আগে মাধ্যমিক- উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার পরপরই ভোট ঘোষণা হল। ভোট ঘোষণার পরে শিবিরের সংখ্যাও কমে গিয়েছে।” চলতি মাসে মেদিনীপুরে ২৬টি শিবির হওয়ার কথা। অন্যবার এই সময়ে ৪০- ৪৫টি শিবির হয়।

মেডিক্যালের এক কর্তার কথায়, “শিবির প্রতি গড়ে ৫০ জন রক্ত দিলে সমস্যা হয় না। বছর কয়েক আগেও শিবির প্রতি ৫৫-৬০ জন রক্ত দিতেন। এখন তা ৩৫- ৪০ জনে এসে ঠেকছে।” ওই কর্তার মতে, পরিস্থিতি যা তাতে একটি বড় শিবির দরকার। যে শিবির থেকে অন্তত ২৫০- ৩০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হতে পারে।

এ দিনই মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের জন্য এসেছিলেন এক যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘এক পরিচিত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মেদিনীপুরে রক্ত না পেলে অন্যত্র খোঁজ করব। না পেলে কি হবে কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।” কিছুক্ষণ পরেই উদভ্রান্তের মতো ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে গেলেন, তিনি রক্ত পেলেন কি না, তা আর জানা হল না।

(ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন