ডেঙ্গির চিকিৎসায় বিলম্ব
State news

রক্ত-রিপোর্ট পেতে দেরি, বাড়ছে ক্ষোভ

জ্বর নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন খড়্গপুর শহরের এক বাসিন্দা। তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিক্যালে মাইক্রো বায়োলজি বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

রক্তে প্লেটলেট কমে দু’তিন দিনের মধ্যেই ডেঙ্গি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠতে পারে। অথচ হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসতেই লেগে যাচ্ছে সপ্তাহ খানেক! ফলে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীকে নিয়ে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন।

Advertisement

জ্বর নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন খড়্গপুর শহরের এক বাসিন্দা। তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিক্যালে মাইক্রো বায়োলজি বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রিপোর্ট আসে ছ’দিন পরে! দেখা যায়, রেলশহরের ওই বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। রোগীর এক পরিজনের বক্তব্য, “রোগ নির্ণয় হতেই যদি সপ্তাহ পেরিয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসা শুরু হবে কবে!”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। খড়্গপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছুঁই ছুঁই। জেলায় সংখ্যাটা আরও বেশি। ইতিমধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। সরকারি ভাবে জেলার একমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা দু’টি। একটি ম্যাক অ্যালাইজা। অন্যটি, এনএস-১ অ্যালাইজা। এনএস-১ অ্যালাইজা পরীক্ষা হয় জ্বরের ২-৩ দিন পর। ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা হয় জ্বরের ৫ দিন পর।

Advertisement

এখন জ্বর নিয়ে বহু মানুষ ভর্তি হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। ডেঙ্গির মতো উপসর্গ থাকলে রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। কেন দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না? রোগ নির্ণয় হতেই যদি সময় লাগে তাহলে চিকিৎসা দ্রুত শুরু হবে কী ভাবে? মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক কর্তার কথায়, “এখানে এই পরীক্ষা হয় নিখরচায়। একটি কিটে প্রায় ৯০ জনের পরীক্ষা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নমুনা না-এলে পরীক্ষা হয় না। তাই একটু সমস্যা হয়।” ”

মেদিনীপুর মেডিক্যালে সময় মতো রক্তের রিপোর্ট না মেলায় বাইরে স্ত্রীকে অন্য ডাক্তার দেখাতে বাধ্য হন খড়্গপুরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা বরুণ সান্যাল। মাস খানেক আগে বরুণবাবুর স্ত্রী মিঠুদেবী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেডিক্যালের ডাক্তার রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বরুণবাবু বলছিলেন, “নমুনা দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, সাত দিন পরে এসে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন। সাত দিন পরেই গিয়েছিলাম। গিয়ে শুনি, কিট ছিল না। তাই পরীক্ষা হয়নি। নমুনাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের রক্তের নমুনা দিতে হবে।” পরে স্ত্রীকে নিয়ে খড়্গপুরের এক ডাক্তারের কাছে যান। চিকিৎসা শুরুর পরে ধীরে ধীরে জ্বর কমে যায়।

শুধু বরুণবাবু নন, মেডিক্যালে দেরিতে রক্তের রিপোর্ট মেলায় অনেকেই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলছেন, “এখন রিপোর্ট পেতে খুব একটা দেরি হচ্ছে না। কিট ছিল না বলে দু’-তিনদিন একটু সমস্যা হয়েছিল।” একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা শুধুমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যালেই হয়। ম্যাক অ্যালাইজা কিংবা এনএস-১ অ্যালাইজা নিশ্চিত ভাবে ডেঙ্গি নির্ধারণ করতে পারে। এখন বিভিন্ন জায়গায় বাজার চলতি এনএস-১ র‌্যাপিড টেস্ট করা হচ্ছে। এটা ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন