নিয়মরক্ষায় ভিড় টানছে কাঁসা-পিতল

সোনা মহার্ঘ। লোকের হাতেও টাকা নেই। ধনতেরাসের বাজারে আনন্দবাজার সোনা মহার্ঘ। লোকের হাতেও টাকা নেই। ধনতেরাসের বাজারে আনন্দবাজার

Advertisement

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৯
Share:

মেদিনীপুরের সাহাভড়ং বাজারে বিকোচ্ছে পিতলের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

স্বামীর সঙ্গে সোনার গয়নার দোকানে গিয়েছিলেন শ্রাবন্তী গুহ। ধনতেরাসে ইচ্ছা ছিল, ২ গ্রামের হাতের কাজের সোনার লকেট কিনবেন। ঝাঁ-চকচকে শোরুমে ঢুকে উপহারের চমক আরও উৎসাহ জুগিয়েছিল শ্রাবন্তীকে। কিন্তু লকেটের দাম শুনে চোখ কপালে উঠল শ্রাবন্তী ও তাঁর স্বামী সুমন গুহের। শেষে ১ গ্রাম ওজনের ছাঁচের লকেট কিনেই ফিরতে হল শ্রাবন্তীকে। সুমন বলছিলেন, “যত গ্রাম সোনা তত শতাংশ মজুরিতে ছাড়ের কথা বলছে। কিন্তু সোনার দাম যে আকাশ ছোঁয়া।”

Advertisement

‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরে নানা ভাষাভাষি মানুষের বাস। ধনতেরাস-দীপাবলিতে এখানে উৎসবের আড়ম্বর বেশি, নিয়ম পালনের তাগিদও বেশি। ধনতেরাসে সোনা কেনার সেই নিয়ম রাখতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। এই ধনতেরাস শব্দটি সম্পদ ও ত্রয়োদশীর মেলবন্ধন। উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই দিন থেকেই ব্যবসায়ী পরিবারে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়। আর গৃহস্থের বাড়িতে দীপাবলির দিনে হয় ধনলক্ষ্মীর পুজো। খড়্গপুর গোলবাজারে গয়নার শোরুমে স্ত্রী মহেশ্বরী ধ্রু-কে নিয়ে সোনা কিনতে এসেছিলেন বড় আয়মার বাসিন্দা রেলকর্মী শ্যামসুন্দর ধ্রু। তিনি বলেন, “আমরা আদতে ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা। ধনতেরাস আমাদের বড় উৎসব। প্রতিবার সোনা কেনা হয়। কিন্তু এ বার সোনার যা দাম তাতে স্ত্রীর মন ভরবে না। হাল্কা ওজনের সোনার চেন নিয়েই ফিরতে হবে।”

খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর, অনেকেই এ বার নিয়মরক্ষায় সোনার বদলে রুপো, এমনকি কাঁসা, পিতলেও বিনিয়োগ করছেন অনেকে। মেদিনীপুর শহরের অলঙ্কার ব্যবসায়ী মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অর্থনৈতিক মন্দার জেরে এ বার সোনার দোকানগুলিতে ভিড় কমেছে। বরং ভিড় বেড়েছে কাঁসা, পিতলের দোকানে। সমৃদ্ধি কামনা করেই সোনা, রুপো, কাঁসা, পিতল বা অন্য কোনও মূল্যবান ধাতু কেনার চল রয়েছে ধনতেরাসে। গ্রাহক টানতে সোনার দোকানগুলি নানা রকম ‘অফার’ দিচ্ছে এ বারও। কোথাও সোনার গয়নার মজুরিতে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, কোথাও প্রতিটি কেনাকাটায় নিশ্চিত উপহার থাকছে। তাতেও ভিড় জমছে না।

Advertisement

গোলবাজারের জুয়েলারি মার্কেটে গয়নার শোরুমে ক্রেতা টানতে যত সোনা তত রুপো দেওয়ার ‘অফার’ রয়েছে। শোরুমের মালিক শৈলেশ শুক্ল বলছেন, “আগে পাঁচদিন আগে থেকে শোরুমে ভিড় থাকত। এ বার ভিড়ই নেই।” এখন প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম চল্লিশ হাজারে ঘোরাফেরা করছে। খড়্গপুরেও অনেকে তাই অন্য ধাতু কিনছেন। তবে রুপোর বাজারও মন্দা। ক্যুইন ভিক্টোরিয়া, কিং এডওয়ার্ডের কয়েনের বদলে হাল্কা রূপোর কয়েন খুঁজছে ক্রেতারা।

সোনার চড়া দাম আর মানুষের হাতে টাকার অভাব, এই সাঁড়াশি আক্রমণেই এ বার অনেকে কাঁসা, পিতলের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। মেদিনীপুর শহরের কাঁসা, পিতলের ব্যবসায়ী অসীম কাইতি মানছেন, ‘‘এ বার কাঁসা, পিতলের বাজার বেশ ভালই। আসলে সোনা ছেড়ে ধনতেরাসে অনেকেই কাঁসা, পিতল কেনায় ঝুঁকেছেন। তাই বাজার এখন চাঙ্গা।’’ শুধু কাঁসা, পিতল নয়, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্রও বিকোচ্ছে ধনতেরাসে।

মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা মৌসুমী সাহার কথায়, ‘‘এই সময়টা শুভ। গত কয়েক বছর ধরেই এই সময় কিছু না কিছু কিনি। এ বার সোনার যা দাম! সামর্থ্যে না কুলোলে সোনার বদলে কাঁসা, পিতলেরই কিছু কিনে নেব।’’ মেদিনীপুরের এক বণিক সংগঠনের কর্তা চন্দন রায়ও মানছেন, ‘‘আমিও শুনেছি, ধনতেরাসে অনেকে সোনা ছেড়ে কাঁসা, পিতল কিনছেন। আসলে নোট বাতিলের পরে মানুষের হাতে টাকা কমেছে। হাতে বাড়তি টাকা থাকলে তখনই মানুষ সোনা কেনেন। হাতে সেই বাড়তি টাকা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন