শালবনির গ্রামে পানীয় জলের ভরসা সেই কুয়ো

পানীয় জলের জন্য ভরসা কুয়ো। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু গ্রামে এখনও পরিস্রুত পানীয় জল যেন স্বপ্ন। নলকূপ তৈরি হলেও একটি গ্রীষ্ম পেরোতে না পেরোতেই তা থেকে আর জল মেলে না। সংস্কারেরও বন্দোবস্তও হয় না। অগত্যা কুয়ো থেকে জল তুলে পান করতে হয় গ্রামবাসীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালবনি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১০
Share:

পানীয় জল তোলার লাইন। শালবনির বাগপিছলা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

পানীয় জলের জন্য ভরসা কুয়ো।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু গ্রামে এখনও পরিস্রুত পানীয় জল যেন স্বপ্ন। নলকূপ তৈরি হলেও একটি গ্রীষ্ম পেরোতে না পেরোতেই তা থেকে আর জল মেলে না। সংস্কারেরও বন্দোবস্তও হয় না। অগত্যা কুয়ো থেকে জল তুলে পান করতে হয় গ্রামবাসীকে। শালবনি ব্লকের ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলাশোল নীচুপাড়ার ছবিটা এমনই। বেলাশোলের গোপাল মাহাতো, গৌরাঙ্গ মাহাতোরা বলছিলেন, “কুয়োর জল পান করা ছাড়া উপায় নেই। গরমে জলস্তর নীচে নেমে গেলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না।’’

কেন এই পরিস্থিতি?

Advertisement

শালবনির বিডিও পুষ্পল সরকারের জবাব, “বিশুদ্ধ পানীয় জল প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত তো। যে পরিমাণ টাকা মেলে তা দিয়ে সব গ্রাম পঞ্চায়েতেরই একটি-দু’টি করে গ্রামে কাজ করা হয় হয়। আগে যেহেতু বেশিরভাগ গ্রামেই পানীয় জল প্রকল্প ছিল না, তাই এখনও সমস্যা রয়ে গিয়েছে।’’ শালবনি ব্লকের ভীমপুর, দেবগ্রাম, সাতপাটি-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এই জল সঙ্কটের পিছনে আরও একটি যুক্তি দিচ্ছে প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, পাথুরে এলাকা হওয়ায় বেশিরভাগ গ্রামেই জল প্রকল্প তৈরি করতে খরচ বেশি লাগে। সাড়ে তিনশো-চারশো ফুটের আগে জলস্তরই মেলে না। বাড়তি খরচের জন্যই বহু গ্রামে এখনও জল প্রকল্প তৈরি করা যায়নি বলে ব্যাখ্যা ব্লক প্রশাসনের।

জঙ্গলমহলের উন্নয়নে এক সময় ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছিল কেন্দ্র। বরাদ্দ টাকায় একাধিক মার্কেট শেড, কমিউনিটি হল, সেচ ও পানীয় জল প্রকল্প তৈরিও হয়েছিল। তার বেশিরভাগই এখন অকেজো হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শালবনি থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য সনৎ মাহাতো বলেন, “বামফ্রন্ট সরকার মানুষকে ভুল বোঝাতে রাস্তার ধারে ধারে অপ্রয়োজনে মার্কেট শেড, কমিউনিটি হল বানিয়েছিল। দলীয় সমর্থক বেছে বেছে কিছু গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পও করেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রাম বঞ্চিতই থেকে গিয়েছে।”

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে রাজ্য সরকার ‘জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান’ বা জ্যাপ তৈরি করে উন্নয়নের কাজে টাকা দিচ্ছে। সেই টাকায় একটি ব্লক বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকা পায়। শালবনির বিডিও জানান, ওই টাকায় জল প্রকল্পের পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করতে হয়। তারই মধ্যে কিছু গ্রামে জল প্রকল্পও হচ্ছে। সম্প্রতি বেলাশোল উপরপাড়ায় একটি জলপ্রকল্প তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত থাকছে উঁচুপাড়া। কবে যে সব গ্রামের মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পাবেন, সেই আশাতেই দিন গুনছেন সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন