কাঠের সাঁকোয় মরণফাঁদ, দুর্ভোগ দেভোগে

ব্লকের গঞ্জ এলাকার সঙ্গে আশপাশের গ্রামগুলির যোগাযোগের ভরসা কাঠের একটি জীর্ণ সাঁকো। কিন্তু সেই সাঁকোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। তাই বছরভরই সাঁকোর মাঝে দেখা দেয় মরণফাঁদ। ঘটছে দুর্ঘটনাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০১:১০
Share:

বিপদ: গর্ত এড়িয়ে এ ভাবেই চলে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

ব্লকের গঞ্জ এলাকার সঙ্গে আশপাশের গ্রামগুলির যোগাযোগের ভরসা কাঠের একটি জীর্ণ সাঁকো। কিন্তু সেই সাঁকোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। তাই বছরভরই সাঁকোর মাঝে দেখা দেয় মরণফাঁদ। ঘটছে দুর্ঘটনাও। সাঁকোর জায়গায় কংক্রিকের পাকা সেতুর তৈরির দাবি তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু হেলদোল নেই সেচ দফতরের।

Advertisement

সবংয়ের দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কপালেশ্বরী নদী-খালের উপর রয়েছে প্রেমবাজার কাঠের সাঁকো। বড়-বড় গর্তে ভরা সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলে পারাপার। বছর খানেক আগে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার প্রকল্পের অধীনে এই সাঁকো সংস্কারের জন্য মাটি পরীক্ষা ও নকশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সেই কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি সেচ দফতরের।

ব্লকের শহর এলাকা বলে পরিচিত তেমাথানি। দেভোগ পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা এই সাঁকো দিয়েই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ প্রেমবাজার হয়ে তেমাথানি পৌঁছন। ভিগনি, ভিগনি বাটিটাকি, খড়পরা, ভিসিন্ডিপুর, কানাইশোল, ভিসিন্ডিপুর পটনা, তুতরাঙা, খেলনা, সুন্দরপুর-সহ বহু গ্রামের মানুষ এই সাঁকোর উপরে নির্ভরশীল। বহু কয়েকবছর আগে অদূরে লখ্যা সেতু কংক্রিটের হয়েছে। কিন্তু প্রেমবাজারের কাঠের সাঁকোর হাল ফেরেনি। ভিগনী বাটিটাকির গৃহবধূ তুলসী চক্রবর্তী বলেন, “আমার দুই মেয়ে টিউশন থেকে সন্ধ্যায় এই সাঁকো দিয়েই গ্রামে ফেরে। সাঁকোর যা দশা, একটু অসাবধান হলেই একেবারে খালে পড়ে যাবে। রাতে গর্তগুলো দেখাও যায় না। খুব চিন্তায় থাকি।”

Advertisement

বছর খানেক আগে এই সাঁকো থেকে পড়ে ভিগনীর বাসিন্দা সহদেব সিংহের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। এখনও ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ভিসিন্ডিপুরের গৌরাঙ্গ মাইতি, ভিগনীর দুলাল বেরারা বলছিলেন, “মোটরসাইকেলে দু’-তিন যাওয়ার সময় মনে হয় সেতু ভেঙে পড়বে।” সাইকেলে ওই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করা তেমাথানির বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শ্যামসুনন্দ দাস অধিকারীর কথায়, “এই পথে প্রায়ই ভিসিন্ডিপুরে মামাবাড়ি যাই। এত বড় বড় গর্ত যে ভয়ে আর রাতে ওই পথ মাড়াই না।’’

সমস্যা সমাধানে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ। যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের দাবি, সেচ দফতরে কাজ না করলেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই সাঁকোর মেরামত হয়। তবে এখানে কংক্রিটের সেতু না হলে সমস্যার সমাধান যে অসম্ভব তা মানছেন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। উপ-প্রধান বিনোদ অগ্রবাল বলেন, “আমরা বছরের নানা সময়ে এই সাঁকো মেরামত করি। পাকাপাকি সমাধানের জন্য বহু বছর ধরে সেচ দফতর বলছি। কিন্তু সুফল পাইনি।” একই বক্তব্য গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৌসুমি দাস দত্তের। তিনি বলেন, “গ্রামের লোকেদের সই-সহ স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে সেচ দফতরে। কিন্তু কংক্রিটের সেতু হচ্ছে কই!”

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের অবশ্য আশ্বাস, “টাকা এলেই সেতুর কাজ হবে” সেচ দফতরের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তথা কপালেশ্বরী প্রকল্প আধিকারিক শুভাশিস পাত্রের বক্তব্য, “ওখানে সেতুর জন্য নকশা ও মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু টাকার অনুমোদন হচ্ছে না। টাকার সংস্থান করে কাজ এগোনোর চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন