বিপত্তি: বাঁশ দিয়ে তোরণ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ রোডে। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর পরে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, জগদ্ধাত্রী পুজোর পরে সেই একই পরিস্থিতি মেদিনীপুর শহরে। পুজো শেষ। বেশিরভাগ প্রতিমাও বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। অথচ, এখনও শহর পুজোর হোর্ডিং-ব্যানার-তোরণের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়নি।
মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুজো ঘিরে হোর্ডিং- তোরণ তৈরি হয়েছিল। এই সব হোর্ডিং- তোরণের বেশির ভাগই থেকে গিয়েছে নিজের নিজের জায়গায়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তোরণ হয়। বেশির ভাগ পুজো কমিটিই তোরণ তৈরি করে। বিজ্ঞাপনের জন্য এই তোরণ তৈরি হয় রাস্তার উপরেই। মেদিনীপুরের প্রধান রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ। এদিকে- সেদিকে তোরণ থাকায় আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। সমস্যা যে গুরুতর তা মানছেন পুরসভা। তাহলে পুরকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে কেন? মেদিনীপুর শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের আশ্বাস, “পুজো শেষ হলেই পুজোর জন্য লাগানো হোর্ডিং- ব্যানার- তোরণ খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দুর্গাপুজোর পরে এ ব্যাপারে পদক্ষেপও করা হয়। সবে জগদ্ধাত্রী পুজো মিটেছে। সব পুজোর এখনও বিসর্জন হয়নি। আর কয়েক দিন দেখা হবে। না- হলে এ ব্যাপারে পুরসভা উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।”
বুধবার রাতে জেলা পরিষদ রোডে তোরণের ফাঁসে থমকে গিয়েছিল বিসর্জনের শোভাযাত্রাই। রবীন্দ্রনগরের এক জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। জেলা পরিষদ রোডে কয়েকটি বিজ্ঞাপনের তোরণ রয়েছে। এলাকার এক জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি তোরণগুলো করেছে। বিসর্জনের শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ রোডের কাছে থমকে যায়। কারণ, তোরণে প্রতিমা আটকে গিয়েছিল। পরে বাঁশ দিয়ে তোরণটিকে আরও উপরে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়।
মেদিনীপুর শহরের রাস্তা আটকে তোরণ নতুন কিছু নয়। কোনও উত্সব-অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে তোরণ তৈরি হলে পরবর্তী সময়ও তা রয়ে যায়। সেখানে অন্য কোনও উত্সব-অনুষ্ঠানের ব্যানার লাগানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে উত্সবের নামের থেকে বিজ্ঞাপন সংস্থার নামই বড় করে লেখা থাকে। মেদিনীপুর শহরের বেশির ভাগ বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিই তোরণ তৈরি করে। এ বারও তাই হয়েছে।
এখন মেদিনীপুরে জগদ্ধাত্রী পুজো বেড়েছে। প্রায় সব ওয়ার্ডেই পুজো হয়। ফলে, বেড়েছে তোরণের সংখ্যাও। শুধু প্রধান রাস্তাগুলোয় নয়, শহরের অলিগলিতেও তোরণ রয়েছে। পুজোর সময় বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল হোর্ডিং- ব্যানার- তোরণে। পণ্যের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ব্যানার- হোর্ডিং লাগানো হয়। যত্রতত্র তোরণ তৈরি হওয়ার ফলে যানজট সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে ছোট- বড় অঘটনও ঘটে। অবশ্য পুরসভা উদাসীন। ফলে, সমস্যা দিন দিন জটিল হয়। শহরবাসীর বক্তব্য, জনবহুল এলাকায় তোরণ তৈরি না- করাই ভাল। তোরণ থাকলে যানজট সমস্যার সৃষ্টি হয়। তোরণ তৈরির ক্ষেত্রে একটা নিয়ম থাকা উচিত। নিয়ম মেনে সুশৃঙ্খল ভাবে তোরণ হলে পরিবেশ এবং সৌন্দর্য দুই- ই বজায় থাকে। মেদিনীপুরে আবার যানজট সমস্যা নতুন নয়। ফুটপাতের জন্য রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে, শহরে যত্রতত্র বাস-অটো- টোটো দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে। ফলে, দুর্ভোগ বাড়ে।
পুরসভার এক সূত্রে খবর, তেমন হলে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলোকে নোটিস পাঠানো হতে পারে। রাস্তা জুড়ে থাকা তোরণ খুলে ফেলার জন্য পুলিশের তরফেও বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দ্রুত ওই কাজ শুরু হবে বলে পুজো কমিটিগুলো আশ্বাস দিয়েছে। মূলত, যানজট সমস্যার কথা মাথায় রেখেই জগদ্ধাত্রী পুজো শেষ হলে পুজোর জন্য লাগানো হোর্ডিং- ব্যানার-তোরণ খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার এক সূত্রের দাবি, বেশিরভাগ পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তড়িঘড়ি মণ্ডপ খুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা খুলতে কিছুটা সময় দরকার। এ বার তোরণ খুলে নেওয়া হবে। আদতে তা কবে হয় সেটাই দেখার।