বন্য জন্তুকে দেখে আতঙ্ক কোলাঘাটের গ্রামে, মারতে মানা

ঘটনার সূ্ত্রপাত, বৃহস্পতিবার রাত ১১ নাগাদ। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুধাংশু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, রাতে বাড়ির সামনে তিনি বিকট গর্জন শুনতে পান। এর পরে বাইরে বেরিয়ে আলো ফেলতে তিনি দু’টি বন্য জন্তু দেখতে পান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৮
Share:

বন্যজন্তুর আতঙ্কে কোলাঘাট এলাকায় জঙ্গলে আগুন লাগিয়েছে গ্রামবাসী (বাঁ দিকে)। ডান দিকে, রামনগর এলাকায় উদ্ধার হওয়া বাঘরোলের দেহ। নিজস্ব চিত্র

গভীর রাতে বাড়ির সামনে বন্য জন্তু দেখে চাঞ্চল্য ছড়াল কোলাঘাট থানার কানাইচক গ্রামে। শুক্রবার এ নিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও ওই এলাকায় ফিরে এল লালগড়ের বাগঘোরা জঙ্গলের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের স্মৃতি।

Advertisement

ঘটনার সূ্ত্রপাত, বৃহস্পতিবার রাত ১১ নাগাদ। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুধাংশু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, রাতে বাড়ির সামনে তিনি বিকট গর্জন শুনতে পান। এর পরে বাইরে বেরিয়ে আলো ফেলতে তিনি দু’টি বন্য জন্তু দেখতে পান। দাবি, জন্তুগুলি চিতাবাঘের মতো দেখতে। এর পরে রাত থেকেই এলাকায় চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের বহু মানুষ রাত জেগে এলাকাও পাহরা দেওয়া শুরু করেন। যদিও ওই রাতে আর ওই বন্য জন্তুগুলি দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ ফের গ্রামের পাশের খড়িজঙ্গল থেকে বন্য জন্তুর গর্জন শুনতে পান গ্রামবাসীরা। এতে ফের নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় এবং গ্রামবাসীরা পশু তাড়ানোর জন্য খড়ি জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেন। দ্রুত খবর দেওয়া হয় বন দফতরে।

Advertisement

বিকালে ওই গ্রামে যান বন দফতরের পাঁশকুড়া রেঞ্জের আধিকারিকেরা। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা কোনও জন্তু বা জন্তুর পায়ের ছাপের সন্ধান পাননি। দফতরের আধিকারিকদের প্রাথমিক ধারণা, ওই জন্তুগুলি বাঘরোল হতে পারে। বন দফতরের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, পরে কোনও বন্য জন্তু এলাকায় নজরে এলেও তাকে না মেরে বন দফতরে খবর দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাগঘোরের জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ। অভিযোগ উঠেছিল এলাকাবাসীরা সেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলেন। সে নিয়ে আমজনতার আক্রমণের মুখে পড়েছিল বন দফতর। তাই এ বার কানাইচক গ্রামে কোনও বন্য জন্তু পাওয়া গেলেও, তার পরিণতি যাতে বেঙ্গল টাইগারের মতো না হয়, সে নিয়ে সতর্ক বনকর্মীরা।

কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানব সামন্ত এ দিন বলেন, ‘‘সকাল থেকে কানাইচক গ্রামে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তবে বন দফতরের আশ্বাসে গ্রামের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তবুও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।’’

জেলার মুখ্য বনাধিকারিক স্বাগতা দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। দফতরের আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছিল। তবে মনে ওটা ‘ফিশিং ক্যাট’ বা বাঘরোল হতে পারে। গ্রামের লোকজন যাতে ওদের না মেরে ফেলে সে জন্য তাঁদের বোঝানো হয়েছে।’’

এদিকে, কোলাঘাটে যখন বনকর্মীরা বন্যজন্তু হত্যা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন রামনগর থানার বালিসাইয়ের কাছে তলকাঁটালিয়া গ্রামে এ দিন উদ্ধার হল একটি মৃত বাঘরোলকে। তবে বাঘরোলটির মৃত্যু কীভাবে হল, তা স্পষ্ট হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গ্রামের বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মারের গোড়ায় মৃত অবস্থায় পড়েছিল প্রাণীটি। গ্রামবাসীদের অনুমান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই বাঘরোলটির মৃত্যু হয়েছে। তবে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, বাঘরোলটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এ নিয়ে বন দফতরের কাছে কোনও খবর নেই। শঙ্করপুর বিট হাউসের আধিকারিক সুধীর সুই বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেথা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন