পরিত্যক্ত: রাজার আমলে তৈরি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রটি এখন ভূতুড়ে বাড়ি। সাঁকরাইলের কুকড়াখুপিতে। নিজস্ব চিত্র
সাঁকরাইল ব্লকের রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কুকড়াখুপি এলাকায় দীর্ঘ কাল আগে ছিল এক দাতব্য চিকিৎসালয়। অনেক কাল হল সেটি বন্ধ। বর্তমানে সেখানকার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালান মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরাই। এলাকার ভরসা তাই হাতুড়েরাই। এই সুযোগে চেম্বার খুলে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয়দের বক্তব্য, কাছাকাছি এলাকায় সরকারি চিকিত্সা পরিষেবা না-থাকায় খুবই সমস্যা হয়। সন্ধ্যার পরে রোগীদের দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো যানবাহন পাওয়াও মুশকিল হয়। তাই কুকড়াখুপিতে একটি গ্রামীণ হাসপাতালের দাবি বহু দিনের।
চারের দশকে ঝাড়গ্রামের তত্কালীন রাজা নরসিংহ মল্লদেবের উদ্যোগে এখানে চালু হয়েছিল একটি দাতব্য চিকিত্সা কেন্দ্র। এখান থেকে চিকিৎসার সুবিধে পেতেন আশেপাশের ১০৮টি গ্রামের বাসিন্দারা। পরবর্তী কালে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই কেন্দ্র ভূতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে। এলাকার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় মানুষের চিকিত্সার স্বার্থেই রাজার উদ্যোগে চালু হয়েছিল এটি। তাঁর অনুরোধে ইংরেজ সেনাবাহিনীর চিকিত্সক পদে ইস্তফা দিয়ে কেন্দ্রটি চালানোর দায়িত্ব নেন সনত্কুমার মুখোপাধ্যায় নামে এক চিকিত্সক। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের পরে মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের অধীনে চলে যায় কেন্দ্রটি। পরে তার নাম বদলে হয় কুকড়াখুপি মেডিক্যাল রিলিফ সেন্টার। ১৯৭১ সালে সনৎবাবুর মৃত্যুর পরে বন্ধ হয়ে যায় সেটি। এলাকাবাসীর দাবি ছিল, আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার রাজা নরসিংহ মল্লদেবের স্মৃতি বিজড়িত দাতব্য চিকিত্সাকেন্দ্রটি রূপান্তরিত করা হোক সরকারি হাসপাতালে। সেই দাবি পূরণ হয়নি। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজার আমলে এটিকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাব কার্যকরী হয়নি। এলাকাবাসীর বক্তব্য, কুকড়াখুপি এলাকায় হাসপাতাল হলে রগড়া অঞ্চলের ৩৪টি গ্রাম, আঁধারি অঞ্চলের ২৪টি গ্রাম এবং বেলিয়াবেড়া ব্লকের পেটবিন্ধি ও খাড়বান্ধি অঞ্চলের আরও ৫০টি গ্রাম উপকৃত হবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাসিন্দা উন্নত চিকিত্সার পরিষেবা পাবেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, এলাকার গ্রামগুলি থেকে নিকটবর্তী ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। বেলিয়াবেড়া ব্লকের তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালটিও ২৫ কিলোমিটার দূরে। সাঁকরাইল ব্লকের ভাঙাগড় গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্বও প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় আরও দু’টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির জন্য সরকারি স্তরে আলোচনা চলছে। একটি লালগড়ে এবং অন্যটি সাঁকরাইল ব্লকে।
সূত্রের খবর, সাঁকরাইলের হাসপাতালটি রগড়া অঞ্চলের কুকড়াখুপিতে করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে শাসকদলও। রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পঞ্চানন দাস বলেন, “আমাদের দাবি মেনে কুকড়াখুপিতে মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে বলে খবর পেয়েছি। এলাকাবাসী চাইছেন, অতীতের স্মৃতি হিসেবে সনৎবাবুর দাতব্য চিকিত্সা কেন্দ্র ভবনটিও সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হোক।”
গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক ও অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর কথায়, “ঝাড়গ্রাম বিধানসভার লালগড়ে ও গোপীবল্লভপুর বিধানসভার সাঁকরাইল ব্লকে দু’টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা চলছে। কুকড়াখুপির বাসিন্দাদের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে জানাব।”