জীর্ণ: এ ভাবেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসাকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
শুধু রোগ সারানোই নয়, সুস্থ হওয়ার পর সমাজের কাছে যাতে রোগীকে ব্রাত্য হয়ে না-থাকতে হয়, সে চেষ্টাও ছিল সরকারের। তাই হাসপাতালের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছিল পুনর্বাসনকেন্দ্র। সে সব এখন ইতিহাস। চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন যক্ষ্মা হাসপাতালের পাশে ওই এলাকা এখন ভগ্নস্তূপ। রাত বিরেতে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। আস্তে আস্তে পুরো এলাকাটাই দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকার বাসিন্দাদের।
দু’দশক আগেও এমন ছিল না পরিস্থিতি। ওই এলাকা পরিচিত ছিল ‘আফটার কেয়ার কলোনি’ নামে। সুস্থ হয়ে ওঠা যক্ষ্মা রোগীরা সেখানে থাকতেন। থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা ছিল সরকারি তত্ত্বাবধানে। রোগীদের স্বনির্ভর করে তুলতে জামা, জুতো বা ব্যাগ তৈরি-সহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। ১৯৯৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় ২২২ একর জমির উপর তৈরি রোগী পুনবার্সন কেন্দ্রটি। পরিকাঠামোর অভাবে যক্ষ্মা হাসপাতালের পরিষেবাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সংলগ্ন ‘আফটার কেয়ার কলোনি’-র অবস্থাও শোচনীয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, হাসপাতাল লাগোয়া ওই জমিটির উপর পুনর্বাসন কেন্দ্রে আবাসন ও বাড়িগুলি এক এক করে ভেঙে পড়ছে প্রতিদিন। ভগ্নপ্রায় বাড়ির দরজা-জানলা চুরি হয়ে যাচ্ছে। চুরি হচ্ছে গাছও। সকাল থেকেই ওই সব আবাসনের ভিতর চলে মদ-গাঁজার ঠেক। নজরদারির ফাঁকে বেদখল হতে শুরু হয়েছে জমির একাংশও। অথচ, চন্দ্রকোনা রোড থেকে চার কিলোমিটার দূরে ডিগ্রি গ্রাম। সেখানে এত বড় একটি হাসপাতালে এক সময় বহু মানুষ আসতেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের পরিজন এবং পুনবার্সন কেন্দ্রের শতাধিক আবাসিকের ভিড়ে ডিগ্রি সংলগ্ন গ্রামগুলিও গমগম করত। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। কিন্তু সরকার উদ্যোগী নয়। তাই প্রায় ২২২ একর জমি পড়ে রয়েছে অবহেলায়।
চন্দ্রকোনা রোড, গড়বেতা ও গোয়ালতোড়-এই তিনটি ব্লকে কয়েক লক্ষ মানুষের বাস। এই এলাকায় বড় কোনও হাসপাতাল নেই। অভিযোগ, গ্রামীণ হাসপাতালে সামান্য সর্দি-জ্বরেও রেফার করে দেওয়া হয় অন্যত্র। ফলে এলাকার মানুষকে ছুটতে হয় ৩৪ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে।
স্থানীয়রা তাই দাবি তুলছেন, সরকারি এই জমির উপরই সরকার গড়ে তুলুক কোনও বড় হাসপাতাল। ডিগ্রি হাসপাতালের সুপার বিশ্বনাথ দাস বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সরকার ও স্বাস্থ্যভবনে বিষয়টি জানানো হয়। জমির নকশাও পাঠানো হয়েছে। নিজেও স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি। লাভ হয়নি।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ আশ্বাস দিয়েছেন, “আমি দ্রুত এলাকায় যাব। প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে বিষয়টি সরকারের নজরে আনব।” জমি বেদখল হওয়া রুখতে নজরদারির কথাও বলেছেন উত্তরাদেবী।