‘আমপানে’র রেশ কাটার আগেই জেলায় কালবৈশাখীর ঝাপটা
Coronavirus Lockdown

ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঠাঁই

আমপানের এক সপ্তাহ পরেই কালবৈশাখীর দাপটে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘর আরও বেহাল হয়ে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০২:০৫
Share:

বুধবার নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ফের জলমগ্ন হয়েছে বাদাম খেত। পাঁশকুড়ার চাঁপাডালিতে। নিজস্ব চিত্র

আমপানে ভেঙেচুরে যাওয়া মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালের বাড়ির উপর ত্রিপল চাপিয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছিলেন নন্দকুমার ব্লকের পরমানন্দপুরের উদয় অধিকারী। বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সেই বাড়িতে থাকলেও বুধবার সন্ধ্যে থেকে বজ্রপাত সহ ঝড়-বৃষ্টিতে জলে ভিজে আতঙ্কে কাটিয়েছেন সারারাত।

Advertisement

উদয় বলেন, ‘‘আমপানে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। ত্রিপল কিনে ছাউনি দিয়ে কোনওরকমে থাকছিলাম। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যের পরে বজ্রপাত সহ ঝড়-বৃষ্টি চলায় সারারাত আতঙ্কে কেটেছে। জানিনা বর্ষায় কী হবে।’’ এমন অবস্থা শুধু উদয়ের নয়, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, কাঁথি-১ ও দেশপ্রাণ ব্লকের কয়েক হাজার পরিবার বুধবার সন্ধ্যের পরে ঝড়-বৃষ্টিতে ফের চরম সঙ্কটে। আমপানের এক সপ্তাহ পরেই কালবৈশাখীর দাপটে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘর আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু পরিবার ফের বাড়ি ছেড়ে প্রাথমিক স্কুল ও শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

জেলা কৃষি দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার বিকেলের পর থেকে জেলাজুড়ে দমকা ঝড় ও বজ্রপাতের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি চলে সারারাত ধরে। বৃহস্পতিবার সকালেও বজ্রপাত সহ বৃষ্টি চলে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৮২.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে দিঘায় ১১২ মিলিমিটার, কাঁথিতে ১০৮.৬ মিলিমিটার, নন্দীগ্রামে ১০৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত নন্দীগ্রাম, খেজুরি, দেশপ্রাণ ও হলদিয়া সহ জেলা জুড়ে ঘরবাড়ির আরও ক্ষতি হয়েছে। আনাজ চাষও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

Advertisement

কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের সরদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অযোধ্যাপুরের হরিজন পল্লিতে প্রায় দেড়শো পরিবার বসবাস করেন। আমপানে এই সব পরিবারের বেশিরভাগের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা গ্রামের শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত কয়েকদিনে বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির উপরে ত্রিপল চাপিয়ে কোনওরকমে বাস করেছিলেন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যে থেকে ফের ঝড়-বৃষ্টিতে বাড়ি ছেড়ে আবার শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে ফিরতে হয়েছে তাঁদের।

নন্দীগ্রামের গাংড়া গ্রামের বাসিন্দা মন্টু উত্থাসিনীর মাটির বাড়ি আমপানে সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। মন্টু বলেন, ‘‘ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে কোনওরকমে রয়েছি। বুধবার সন্ধ্যে থেকে ঝড়-বৃষ্টির জেরে সবাই জলে ভিজে গিয়েছিলাম। এ ভাবে কতদিন কাটবে জানি না।’’

জেলাপ্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রে খবর, আমপানের দাপটে জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ৩১ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য বুধবার পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ত্রিপল বরাদ্দ হয়েছিল। বরাদ্দ ত্রিপল বণ্টনের জন্য বিভিন্ন ব্লকে পাঠানো হয়েছে। তা আপাতত বিলি করা হচ্ছে।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদারের অবশ্য দাবি, ‘‘আমপানে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে বুধবারের ঝড়-বৃষ্টিতে নতুন করে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনও রিপোর্ট আসেনি। নতুন করে কোনও ত্রাণশিবিরও খোলা হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের লোকজনদের জন্য এদিন আরও ১১ হাজার ত্রিপল বিভিন্ন ব্লকে পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন