ক্ষুব্ধ: স্বাস্থ্য দফতরের গাড়ি দেখেই ধেয়ে আসেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
দিন পনেরো হল জ্বরের প্রকোপ চলছে গ্রামে। অবশেষে সেখানে দেখা মিলল স্বাস্থ্যকর্মীদের।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ ভগবানপুর-২ ব্লকের ইক্ষুপত্রিকার গ্রামে জ্বরের রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের ঘেরাওয়ে তাঁরা আটকে রইলেন ঘণ্টা দেড়েক। স্থানীয়দের অভিযোগ, এত দিন ধরে জ্বর চললেও দেখা মেলেনি দফতরের কারও। পাশাপাশি, প্রায় ২০ জনের ডেঙ্গির রক্তপরীক্ষার (এনএসওয়ান এজি) পজিটিভ রিপোর্ট এলেও তা মানতে রাজি হয়নি স্বাস্থ্য দফতর। এমন জ্বর-আতঙ্কের মধ্যে চুন, ব্লিচিং ছড়ানোর দায়িত্বও নেয়নি দফতর। সে সব কাজ গ্রামবাসীরা নিজেরাই করেছেন। তাই এ দিন স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। শেষে ভূপতিনগর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
স্বাস্থ্যকর্মীরা এ দিন ২০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে কি না তা পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ জানা বলেন, “৭২ ঘণ্টা পর রিপোর্ট আসবে। গ্রামজুড়ে সচেতনতার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে দফতর।”
তবে গ্রামের জ্বর-পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট বিপজ্জনক। ইক্ষুপত্রিকার পশ্চিমপল্লির বাসিন্দা সুস্মিতা দাস ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তাঁর বাড়ির আরও ৫ জন জ্বরে আক্রান্ত। সুস্মিতাদেবীর পড়শি নারায়ণ দাসও আক্রান্ত হন ডেঙ্গিতে। তাঁর ছেলে আর নাতিও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। গ্রামের মিশ্রপাড়া ও পতিপাড়াতেও বেশ কয়েক জনের রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।
পাশের গ্রাম বামুনিয়াতেও একই ছবি। ৩ সেপ্টেম্বর সেখানে মৃত্যু হয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্র আশিস পোদ্দার (১৫)-এর। তার বাবা নির্মল পোদ্দার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেশ গিরির দাবি, জ্বরের চিকিৎসা ঠিকমতো না হওয়াই মৃত্যুর কারণ। স্থানীয় বাসিন্দা অর্ধেন্দু দাস বর্তমানে কলকাতায় চিকিৎসাধীন। টানা দশ দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন গৌরী দাস।
দুই গ্রাম থেকে ভূপতিনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। তা হলে সেখানে চিকিৎসা না করিয়ে তমলুক বা কলকাতা যাচ্ছেন কেন গ্রামবাসীরা? বামুনিয়ার দীনবন্ধু দাসের কথায়, “বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার খরচ খুব বেশি। কোথাও ৫০০, কোথাও ১৫০০ টাকা লাগছে। এত টাকা খরচ না করে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।” এ দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও রোগীর চাপ প্রবল। ৩০ বেডের ইনডোরে ভর্তি রয়েছে ৬০ জন। এর মধ্যে ১৪ জনই জ্বরের রোগী।
সব মিলিয়ে এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা।