সিবিআই অফিসার সেজে ধৃত

পুরনো বন্ধুর সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলে সগর্বে নিজেকে সিবিআই অফিসার হিসাবে পরিচয় দিত সে। এ হেন ছাত্রকে নিয়ে গর্ব বোধ করতেন শিক্ষকেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলদা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

ধৃত ডিন্টু। Bনিজস্ব চিত্র.

হাতে দামি স্মার্টফোন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে এলাকায় ‘টহল’। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলে সগর্বে নিজেকে সিবিআই অফিসার হিসাবে পরিচয় দিত সে। এ হেন ছাত্রকে নিয়ে গর্ব বোধ করতেন শিক্ষকেরাও।
অবশেষে ভুল ভাঙল। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ডিন্টু প্রামাণিক নামে ওই ভুয়ো সিবিআই অফিসার। সোমবার রাতে বেলদা থানা এলাকার মূলকুড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডিন্টুকে গ্রেফতার করতে গিয়ে প্রথমে অবশ্য কিছুটা থতমত খেয়েছিল পুলিশও। কারণ, অন্যদের মতো পুলিশের কাছেও নিজেকে সিবিআই অফিসার হিসেবে দাবি করে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিল ডিন্টু। বচসার ফাঁকেই লাগাতার হোয়াটআপে মেসেজ পাঠাতে থাকে সে। হঠাৎই ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশকর্মীর মোবাইলে দিল্লি থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তিও দাবি করেন ডিন্টু সিবিআই অফিসার। কিন্তু কিছুতেই ধন্দ কাটছিল না পুলিশকর্মীদের। কারণ, প্রথমত ডিন্টুর কথায় ধরা পড়ছিল নানা অসঙ্গতি। দ্বিতীয়ত, সিবিআই অফিসার হিসেবে ডিন্টু মোবাইলে যে পরিচয়পত্র দেখাচ্ছিল তাতেও সন্দেহ দানা বাঁধে পুলিশকর্মীদের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। পরিচয়পত্র ভুয়ো তা নিঃসন্দেহ হওয়ার পর ডিন্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাড়ি মূলকুড়িয়া গ্রামে হলেও বেশ কয়েকবছর দিল্লিতেই থাকত ডিন্টু। গ্রামে ফিরলে ঘুরে বেড়াত দাপিয়ে। সোমবার রাতের ঘটনার পর আশন্দা শিক্ষা নিকেতন বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপককুমার গিরি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলেই পড়েছে। জানিয়েছিল সিবিআই অফিসার হয়েছে সে। গর্ববোধ করতাম। যদি এই হয় তাহলে তো ভাবাই যায় না।’’
কিন্তু কেন গ্রেফতার হল ডিন্টু? পুলিশ সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে দূর সম্পর্কের এক দাদু বৃন্দাবন প্রধানের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নেয় ডিন্টু। পরে তিনি টাকা ফেরত চাইলেও নানা অছিলায় সে এড়িয়ে যেত। পরে এক লক্ষ টাকার একটি চেক দেয়। কিন্তু সে চেকও বাউন্স হয়। মেদিনীপুর আদালতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগ দায়ের করেন বৃন্দাবন। তিনি বলেন, ‘‘আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে ফেরত পাইনি। খারাপ ব্যবহার পেয়েছি। আদালতে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ও যে নিজেকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে আমাদের হুমকি দিয়েছে এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে।’’
আদালত থেকে জারি হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা। অভিযুক্তের বাবা ব্রজেন প্রামাণিক বলেন, ‘‘একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল জানি। ওই দিন তার বিয়ে থাকায় হাজিরা দিতে পারেনি। ছেলের অন্য কাজ নিয়ে কিছু জানি না। দিল্লিতে থাকত বলেই জানাত সে।’’ পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু বৃন্দাবন নয়। বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নাম করে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে ডিন্টু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন