এত্তা জঞ্জাল... হলদিয়ার সুপার মার্কেটে।
স্লোগান ছিল— ‘গ্রিন হলদিয়া, ক্লিন হলদিয়া’। স্থানীয়রা বলেন উল্টো কথা— ‘প্লাস্টিক হলদিয়া’।
মহকুমার প্রাণকেন্দ্রে যত্রতত্র পড়ে থাকে শহরের আবর্জনা। তার একটা বড় অংশ নানা ধরনের প্লাস্টিক। ফলে বন্ধ নিকাশি নালা। উপচে পড়া আবর্জনা বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। হলদিয়া টাউনশিপ থেকে হলদি নদী পাড়ের দিকে যেতে অজস্র দোকান। রয়েছে বহু ফাস্ট ফুডের দোকানও। যেন অনিবার্য ভাবেই রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পলিথিনের ব্যাগ, থার্মোকলের খাবারের প্লেট এবং প্যাকেটজাত খাবারের প্লাস্টিক-ঠোঙা। খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় বহু মানুষের আনাগোনা। নন্দীগ্রাম থেকে নানা কাজে এসে এই সব দোকানেই খাওয়া দাওয়া সেরে নেন তাঁরা। উচ্ছিষ্ঠ, থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিকের প্যাকেট তারই সাক্ষ্য বহন করছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে কোন ভ্যাটের ব্যবস্থা নেই। আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে নদীতে। একই অবস্থা মোহনা মার্কেটেরও। গোটা এলাকায় ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ। সিটি সেন্টার ও দুর্গাচক এলাকা প্রায় নরককুণ্ড। মহকুমার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বাজার এলাকা। ক্রেতাদের সব্জি, আনাজ সবই দেওয়া হয় পলিব্যাগে। ৪০ মাইক্রনের হিসাব জানেন না কেউ। ফলে দূষণের হাত থেকে রক্ষা নেই।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে ছোট একটি ভ্যাট থাকলেও তা আবর্জনা ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। দুর্গাচক, সিটি সেন্টার, সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, তালপুকুর এলাকার দু’ধার দিয়ে গিয়েছে নিকাশি নালা। সেগুলি ভরে থাকে প্লাস্টিকে। বর্ষাকালে বেশিরভাগ সময়ই নালা উপচে নোংরা জল রাস্তা
ভাসিয়ে দেয়।
দুর্গাচকেই রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল। সেই জায়গাটিকেও প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যায়নি। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক নিউটন দাস জানান, “শুধু দূষণ নয়। প্লাস্টিক এমন একটি যৌগ যাতে হাইড্রোজেন ও কার্বন থাকে। ফলে পলিব্যাগে খাবার বহন করা ঠিক নয়। বিশেষত গরম খাবার প্লাস্টিকে রাখলে তা থেকে তৈরি হয় কার্সিনোজেন। এ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।”
হলদিয়া বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদাস ঘটক বলেন, “আমরা অনেকেই বাধ্য হয়েই প্লাস্টিক ব্যবহার করছি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা বা নজরদারি নেই। কিন্তু আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে সচেতন পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত দাসের অভিযোগ, “তেলের বোতল ব্যবহার করা অনেক ভাল। পাউচ প্যাকেট ব্যবহার করে তা ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়। নিকাশি নালাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। থার্মোকলের প্লেটের সবচেয়ে বেশি দূষণ ছ়়ড়াচ্ছে নদীর ঘাটে।”
দেউলপোতা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষক অসিত শতপথী বলেন, “পাতলা প্লাস্টিক (৪০ মাইক্রনের নীচে) মাটির উর্বরতা কমায়। পর্যাপ্ত জল ঢুকতে পারে না মাটির ভিতরে। ফলে জলস্তর নীচে নামতে থাকে। পানীয় জল, সেচের জলের সংকট দেখা দেয়।”
সমস্যা ও বাস্তব পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। তাঁর সাফাই, “উপ-নির্বাচন আছে বলে এখন সব ঢিমেতালে চলছে। তার পর প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে বাজারে বাজারে চলবে অভিযান চলবে।’’ দেবপ্রসাদবাবু দাবি করেছেন, প্লাস্টিকের বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
ছবি: আরিফ ইকবাল খান।