খেলার মাঠের দুরবস্থা ভাবাচ্ছে হলদিয়াকে

একদিকে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ বিমুখ হচ্ছে খেলাধুলা থেকে, অন্যদিকে যাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন কৃতিত্বের সঙ্গে তাঁরা শহর ছাড়ছেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য। পরিকাঠামো গত সমস্যায় জর্জরিত হলদিয়ার ক্রীড়া মহল। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন বা টেবল টেনিস সর্বত্রই খামতি রয়েছে পরিকাঠামোর। শহর জুড়ে কোথাও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, নেই প্রশিক্ষক। এমনকী নেই একটা উপযুক্ত মাঠও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৫
Share:

হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে চলছে ফুটবল প্রশিক্ষণ। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

একদিকে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ বিমুখ হচ্ছে খেলাধুলা থেকে, অন্যদিকে যাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন কৃতিত্বের সঙ্গে তাঁরা শহর ছাড়ছেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য। পরিকাঠামো গত সমস্যায় জর্জরিত হলদিয়ার ক্রীড়া মহল। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন বা টেবল টেনিস সর্বত্রই খামতি রয়েছে পরিকাঠামোর।

Advertisement

শহর জুড়ে কোথাও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, নেই প্রশিক্ষক। এমনকী নেই একটা উপযুক্ত মাঠও। এক সময় হলদিয়াতে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে আবাসিক ফুটবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছিল আইএফএ। বছর ছয়েক আগে আর্থিক সমস্যার কারণে সেই ক্যাম্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই ক্যাম্প থেকেই উঠে এসেছিলেন বহু ভাল ফুটবলার। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন কলকাতার নামি ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলছেন। দু’একজন সুযোগ পেয়েছেন ভারতীয় দলেও।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এখন টিঁকে আছে শুধুমাত্র খাতায় কলমে। স্পনসরশিপ না পাওয়ায় উঠে গিয়েছে ওই ফুটবল ক্যাম্প। সংস্থার সম্পাদক কৌশিক চক্রবর্তীর কথায়, “আইএফএ-র সঙ্গে যৌথভাবে ২০০৪ সালে ওই প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছিলাম। কিন্তু কোথাও কোনও আর্থিক সাহায্য না পেয়ে বছর চারেকের মধ্যেই বাধ্য হই বন্ধ করে দিতে। খেলাধুলার উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা দরকার।”

Advertisement

ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলারই এই অবস্থা হলে সাঁতার, ব্যাডমিন্টন বা অন্য খেলাগুলির যে কেমন অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হলদিয়ার প্রাক্তন ফুটবলার অমিত চক্রবর্তীর কথায়, “যে কোনও খেলার জন্যই দরকার ভালো মাঠ, সুইমিংপুল, অত্যাধুনিক জিম, অনুশীলনের আধুনিক সরঞ্জাম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। তাছাড়াও দরকার ভাল প্রশিক্ষকের। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে এ সব কিছু নেই বললেই চলে।”

শহরে খেলার হাল হকিকত প্রায় সকলেই জানেন। গোটা শহরে স্টেডিয়াম বলতে দু’টি। একটি রয়েছে দুর্গাচকে। অন্যটি হলদিয়া টাউনশিপে একটি শিল্পসংস্থার নিজস্ব স্টেডিয়াম। কোনও কোনও এলাকায় মাঠ থাকলেও তা একেবারেই খেলাধুলার উপযোগি নয় বলে মনে করেন ক্রীড়াবিদরা। তবু একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওই সব মাঠেই কিছু কিছু সংস্থা খেলাধুলা চালিয়ে যাচ্ছে। যাঁরা এ সবের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা মনে করেন হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনে ভালো খেলোয়াড় উঠে আসার সম্ভাবনা আছে। অথচ পরিকাঠামোর অভাবে প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উঠতি খেলোয়াড়রা।

হলদিয়ার মেয়ে ঋতুপর্ণা দাস জাতীয় স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলছেন। সম্প্রতি কেরালার এরনাকুলামে আয়োজিত ৩৫ তম ন্যাশনাল গেমসে ব্যাডমিন্টনে ডাবলসে সোনা পেয়েছেন। সিঙ্গলসে পেয়েছেন রুপো। ঋতুপর্ণা এতদিন হলদিয়ার আইওসি ক্লাবে অনুশীলন করতেন। তবে গত চার বছর তিনি প্রশিক্ষণের জন্য হায়দরাবাদের গোপিচাঁদ ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে রয়েছে। ঋতুপর্ণার মা অনন্যা দাসের কথায় “এখানে খেলাধুলার পরিকাঠামো নেই। ব্যাডমিন্টন খেলার ভাল কোট, ভাল প্রশিক্ষক নেই, তাই বাধ্য হয়েই মেয়েকে হায়দরাবাদে পাঠিয়েছি।”

হলদিয়া টাউনশিপ-সহ প্রায় সর্বত্রই কিছু ক্লাব ফুটবল, ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ শিবির করে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে সব শিবিরে পরিকাঠামো বলতে প্রায় কিছুই নেই। মিলন সঙ্ঘ নামে একটি ক্লাব ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুর্গাচক স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেয়। ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক অরুণ বাগের কথায়, “খেলার ভাল মাঠ বলতে দুর্গাচক স্টেডিয়াম। মাঠের অভাবে একই মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট খেলা হয়। ফলে মাঠের ক্ষতি হয়। অসুবিধা হয় দু’টি খেলা অনুশীলনের ক্ষেত্রেও।”

হলদিয়া টাউন অ্যাথলেটিক ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক দেবব্রত সোম বলেন, “কোনও উপায় নেই বলে আমরা হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানেই ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। শুধু পুরসভা বা প্রশাসন নয়, বিভিন্ন শিল্পসংস্থা যদি খেলাধুলার উন্নয়নে এগিয়ে আসে, তবে ভালো হয়।”

হলদিয়া ইউরেকা স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, আইওসি এমপ্লয়িজ ক্লাব, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট-সহ কিছু ক্লাব, সংস্থা ক্রিকেট খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তবে সেখানেও রয়ে গিয়েছে অভাব অভিযোগ। ক্রিকেটের পরিকাঠামোর অভাবের কথা জানালেন হলদিয়া ইউরেকা স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক শান্তনু বেরা। তাঁর কথায়, “ক্রিকেট খেলার মতো পরিকাঠামোর নেই হলদিয়াতে দুর্গাচক স্টেডিয়ামে। কোনও রকমে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সেখানে ফুটবল খেলাও চলে। ফলে ক্রিকেটের পিচ তৈরি করা যায় না। নেট প্র্যাক্টিসের কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি।”

হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য জানান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর হলদিয়ার আটটি খেলার মাঠের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। দুর্গাচকের দু’টি স্কুল মাঠ, গান্ধীনগর ফুটবল মাঠ, ক্ষুদিরামনগর ফুটবল মাঠ, বাড়ঘাসিপুর ব্রতীসঙ্ঘের মাঠ, অরুণচন্দ্র হাইস্কুল মাঠ, চকদ্বীপা হাইস্কুল মাঠ ও সুতাহাটার আজাদহিন্দ ময়দানের জন্য ওই টাকা খরচ করা হবে। ওই মাঠগুলিতে তৈরি করা হবে ক্লাব হাউস, শৌচাগার, থাকবে জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা।

ইতিমধ্যে সাতটি মাঠের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি পুরসভার। তাছাড়াও হলদিয়ার মিলনে পুরসভা ও একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে যে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয়েছিল এ বছর বর্ষার আগে সেই কাজ শেষ করার লক্ষমাত্রা রয়েছে। হলদিয়া পুরসভা এলাকায় চারটি অত্যাধুনিক জিম করার পরিকল্পনা আছে। তাছাড়াও হলদিয়ার দুর্গাচকের আইটিআই কলেজের পুকুরটিকে যাতে সুইমিং পুল হিসাবে গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুরসভা। তাঁর আরও দাবি গান্ধীনগর ফুটবল মাঠে হলদিয়া পুরসভার উদ্যোগে ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। সেখানে কলকাতা থেকে ভাল কোচ এনে উঠতি ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে ব্যাডমিন্টন বা টেবিলটেনিস খেলার উন্নয়নে সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন