দোকানের নিরাপত্তায় সিসিটিভি বসানোর আবেদন। — নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক বছরে বার বার আক্রান্ত হয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গড়বেতায় খুন হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী অমল দত্ত। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। সে ঘটনার কিনারা এখনও করে উঠতে পারেনি পুলিশ। সে দিন দুপুরে বাজারে সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। তাই ঠিক কী ঘটেছিল ওই দোকানের মধ্যে, জানতেই পারছে না পুলিশ। দোকানে কোথাও কোনও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না।
এ বার তাই জেলা পুলিশ সোনার ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছে দোকানে অন্তত একটা সিসি ক্যামেরা লাগাতে। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন থানায় এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্যই এই পরামর্শ। একটা সিসিটিভি অনেক নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে। দোকানের মধ্যে অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটে গেলেও দ্রুত তার কিনারা করা যায়।” পুলিশি পরামর্শের কথা মানছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণশিল্পীদের সংগঠনও। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, “এ বার নতুন করে নাকার ব্যবস্থা করা হবে। অপরাধমূলক কাজকর্ম ঠেকাতে দোকান বন্ধের সময়ও মোবাইল পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে।” সেই সঙ্গেই পুলিশ মনে করছে, সোনার দোকানগুলোয় সিসিটিভি বসানো হলে অপরাধমূলক কাজ কমবে, আবার দ্রুত অপরাধীদের চিহ্ণিত করাও সম্ভব হবে।
মেদিনীপুর স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আলোক কামিল্যা বলেন, “সংগঠনের তরফে সকল সদস্যকেই সিসিটিভি লাগানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশের পরামর্শ তো ভালর জন্যই।” বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির মেদিনীপুরের নেতা জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “বড় বড় সোনার দোকানে সিসিটিভি থাকেই। বেশির ভাগ ছোট দোকানেই তা নেই। আর দুষ্কৃতীরা এই ছোট দোকানকেই ‘টার্গেট’ করে।”
মেদিনীপুরের সোনার ব্যবসায়ী তপন পাণ্ডব বলেন, “আমার ছোট দোকান। দীর্ঘদিন ধরেই এ ভাবে চলছে, সিসিটিভি নেই। কিন্তু গড়বেতার ঘটনার কথা মনে করলেই শিউরে উঠি। এ বার কিছু একটা করতেই হবে। সিসিটিভি থাকলে সব দিক থেকেই সুবিধে।”
গড়বেতার ঘটনার পরে জেলা জুড়েই উদ্বেগ। যে ভাবে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভরদুপুরে দোকানের মধ্যেই অমল দত্তকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা তাতে উদ্বিগ্ন হন ব্যবসায়ী মহল। মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো শহরে সোনার ব্যবসায়ী খুনের নজির রয়েছে। সদর শহরে ২০১৪ সালের জুনেই খুনের ঘটনা ঘটে। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন স্বপন পাণ্ডব নামে এক সোনার ব্যবসায়ী। বাড়ি থেকে কিছু দূরে তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা।
বড় দোকানগুলোয় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী থাকে। দোকান মালিকেরা নিজেদের উদ্যোগে রক্ষী রাখেন। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়,, “জেলায় সমাজবিরোধীদের আনাগোনা নেই, এটা বলা যায় না। গড়বেতার ঘটনা তার প্রমাণ।’’