সোশ্যালে চোখ পুলিশের

পরিস্থিতি দেখে সক্রিয় হয়েছে জেলা পুলিশ। শুক্রবার মেদিনীপুরে পুলিশের এক বৈঠকে মেদিনীপুরের ওই দুই ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে পুলিশের এক সূত্রে খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৫
Share:

সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ব্যানার টাঙাচ্ছে পুলিশ। মেদিনীপুর কালেক্টরেটে। নিজস্ব চিত্র

পরপর দু’দিন দু’টি ঘটনা ঘটে গিয়েছে মেদিনীপুরে। ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে আক্রাম্ত হয়েছেন এক ইঞ্জিনিয়ার ও এক কিশোর। এক ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের জেরে, আরেক ক্ষেত্রে পাক-প্রশস্তি করে হামলার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে সক্রিয় হয়েছে জেলা পুলিশ। শুক্রবার মেদিনীপুরে পুলিশের এক বৈঠকে মেদিনীপুরের ওই দুই ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে পুলিশের এক সূত্রে খবর। ঠিক হয়েছে, এমন ঘটনা এড়াতে এ বার সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করবে পুলিশ। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। কেউ কোনও ‘স্পর্শকাতর’ পোস্ট করেছেন কি না নজরে রাখা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দু’টি ঘটনাই আমাদের নজরে এসেছে। যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে, এ ব্যাপারে আমরা মেদিনীপুরের মানুষকে নিশ্চিন্ত করছি।’’ পুলিশ সুপারের আরও সংযোজন, ‘‘আমরা বিজ্ঞাপন দেব, সচেতনতামূলক প্রচার চালাব। মানুষজনকে সতর্ক করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই করা হবে।’’

এ ক্ষেত্রে ঠিক কী বার্তা দেবে পুলিশ?

Advertisement

জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমরা বলব, যদি কোনও মন্তব্য নিয়ে কারও আপত্তি থাকে তাহলে পুলিশের কাছে জানান। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। মানুষজন যাতে নিজের হাতে আইন তুলে না নেন সেই বার্তা দেওয়া হবে।’’

পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় জওয়ানদের মৃত্যুর পরে দেশ জুড়ে নানা ঘটনা ঘটছে। এ রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। তালিকায় ঢুকে পড়েছে শান্তির শহর, সম্প্রীতির শহর মেদিনীপুরও। প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার রাতে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন আমতলায় একদল যুবকের হাতে নিগৃহীত হন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ধর। কলকাতার বাসিন্দা দীপায়ন এখন কর্মসূত্রে মেদিনীপুরে থাকেন। গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। সঙ্গে শাসানি, ‘খুব মুসলিম দরদি হয়েছিস? খুব কাশ্মীর প্রেম? ভারতমাতা কি জয় বল।’ মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানানোর পরই এই মারধর- হেনস্থা বলে অভিযোগ দীপায়নের। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় জওয়ানদের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ফেসবুকে দীপায়ন লিখেছিলেন, পাকিস্তান মানেই সব মানুষ খারাপ, তিনি মনে করেন না। হিংস্রতার বিরুদ্ধে হিংস্রতা, এই সমাধানে তিনি বিশ্বাস করেন না।

অন্য দিকে, ফেসবুকে দেশবিরোধী মন্তব্য করেছে, এই কথা বলে বৃহস্পতিবার রাতে মেদিনীপুর স্টেশন চত্বরের কাছে বছর সতেরোর এক কিশোরকে কান ধরে ওঠবোস করায় একদল যুবক। স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা স্কুলছাত্র ওই কিশোর নিজের ফেসবুকের ‘প্রোফাইল পিকচার’ বদলে নিজের ছবি ও পাকিস্তানের পতাকা দিয়েছিল। লিখেছিল, ‘আই লাভ পাকিস্তান। তারপরই এই নিগ্রহ বলে অভিযোগ।

দীপায়ন নিজে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে হামলাকারীদের তিনি চিনতে পারেননি বলেই দাবি। আর ঘটনার পরেই নিগৃহীত কিশোরকে থানায় নিয়ে এসেছিল পুলিশ। গোটা ঘটনা জানার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল তাকে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারি বাড়াতে পৃথক ‘মনিটরিং সেল’ খুলেছে জেলা পুলিশ। সঙ্গে ‘সাইবার সেল’ও খোলা হয়েছে। মেদিনীপুরে এই দুই ঘটনার পরে দু’টি সেলকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে বলে পুলিশের এক সূত্রে খবর। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন জিনিস আসে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা থেকে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু অনেকেই সে সব না বুঝে পোস্ট ফরোয়ার্ড করে দেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো রুখতে তাই আরও কঠোর হচ্ছে জেলা পুলিশ। থানাগুলোকেও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুলিশের কড়া নজরদারির আওতায় এ বার সোশ্যাল ওয়াল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন