বাইকে কেরামতি! থানায় গার্জেন কল

পথে দু’চাকা নিয়ে আইন ভাঙলেই ‘গার্জেন কল’ করবে পুলিশ।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

পথে দু’চাকা নিয়ে আইন ভাঙলেই ‘গার্জেন কল’ করবে পুলিশ।

Advertisement

স্কুলে অন্যায় করলেই ভয়ে দুরুদুরু করত বুক। এই বুঝি ‘গার্জেন কল’ হল। বেয়াড়া নাবালক দু’চাকা সওয়ারিদের ক্ষেত্রে এ বার একই পদ্ধতি নিচ্ছে পুলিশ। কোনও নাবালক প্রথমবার ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে তার অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়ে আদায় করা হবে মুচলেকা। অভিভাবকরা মুচলেকা দেওয়ার পরেও পরের বার ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ ও জরিমানা করবে পুলিশ। আঠারো বছরের আগে বিনা লাইসেন্সে ও বিনা হেলমেটে মোটরবাইক নিয়ে পথে নামলে রেয়াত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

শহরাঞ্চলে গিয়ার বিহীন স্কুটি চালানোর জন্য নাবালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় পরিবহণ দফতর। সে ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট গতিবেগে হেলমেট পরে স্কুটি চালাতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে সেই নিয়মের তোয়াক্কা করে না কেউই। বিশেষত, শহরের রাস্তায় নাবালক বাইক আরোহীদের উৎপাতে ত্রস্ত থাকেন পথচারীরা। শুধু শহর নয়। শহরতলি এমনকি, গ্রামেও ক্রমাগত বাড়ছে এই প্রবণতা। ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননের বাসিন্দা লক্ষ্মী দে বলেন, ‘‘নাবালক ও কম বয়সী কিশোর-যুবকদের একাংশ এত বেপরোয়া ভাবে বাইক চালায় , যে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার সময় খুব শঙ্কায় থাকতে হয়। হেলমেট না পরে নাবালক বাইক চালকরা নিজেদের জীবন তো বিপন্ন করছেই, সেই সঙ্গে বেপরোয়া বাইক চালিয়ে পথচারীরাদের বিপদের কারণ হয়ে উঠছে।’’ ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক শুভজিৎ জানা বলেন, "অল্প বয়সীদের জন্মদিনে কিছু অভিভাবক বাইক কিনে দিচ্ছেন। ফলে অভিভাবকদের আগে সচেতন হতে হবে। নাবালকদের নিয়ম ভাঙার জন্য অভিভাবকদের একাংশ দায়ী।’’

Advertisement

এতদিন কোনও নাবালক ট্র্যাফিক আইন ভেঙে ধরা পড়লে সাধারণ ভাবে জরিমানা আদায় করেই ছেড়ে দিতেন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, বারবার বোঝানো হলেও নাবালকদের ট্র্যাফিক আইনভঙ্গের প্রবণতা কমছে না। অগত্যা গার্জেন কলের বন্দোবস্ত। জেলা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নাবালক সন্তানদের হাতে বাইক না দেওয়ার জন্য অভিভাবকদেরও অনুরোধ করা হচ্ছে। নাবালকদের ধরা হলে এ বার অভিভাবকদের ডেকে মুচলেকা আদায় করা হবে।’’

কোন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত?

জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক বছরে (২০১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর) বাইক দুর্ঘটনা হয়েছে ৩৭টি। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এর মধ্যে নাবালক ৫ জন। চলতি বছরে জেলায় মোটরবাইক দুর্ঘটনায় বাইকেরই আরোহী ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের কারওই মাথায় হেলমেট ছিল না। যদিও মৃতদের কেউই নাবালক নয়। জেলা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হয়েছে। কিন্তু একাংশ এলাকাবাসী ট্র্যাফিক আইন মানছেনই না। সেই কারণে আমাদেরও কড়া পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’ পুলিশের এই কড়া পদক্ষেপ থেকে এ বার রেহাই পাবে না নাবালকেরাও।

গোঁফের রেখা অস্পষ্ট। রাস্তায় বাইক রেসে ‘ধুম’ ছোটালে, ঘুম উড়তে পারে অভিভাবকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন