নেশাই অসুর, আগাম পথে পুলিশ

বিষ মদ খেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৪ জনের মৃত্যু মানুষের মন থেকে এখনও মিলিয়ে যায়নি। জেলার আড়ংকিয়ারানাতেও সেই বিষ মদের বলি হয়েছেন অনেকেই। প্রতিবারই ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতা চেখে পড়ে। বারবার অভিযান চালানো হয় চোলাই ঠেকে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১২
Share:

গণ্ডগোলের পর বেআইনি মদের ঠেক ভেঙে দিচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

বিষ মদ খেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৪ জনের মৃত্যু মানুষের মন থেকে এখনও মিলিয়ে যায়নি। জেলার আড়ংকিয়ারানাতেও সেই বিষ মদের বলি হয়েছেন অনেকেই। প্রতিবারই ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতা চেখে পড়ে। বারবার অভিযান চালানো হয় চোলাই ঠেকে। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কেন এমন অভিযান হয়, তা নিয়ে দিন কয়েক আগেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সেই কড়া বার্তার পরও ফের মদ খেয়ে গণ্ডগোলের সাক্ষী রইল তমলুক।

Advertisement

তমলুক থানার নোনাকুড়ি বাজারে সরকারি অনুমোদিত মদ দোকানের কাছেই রয়েছে মদের ঠেক। সেখানে রবিবার রাতে কয়েকজন মদ্যপ নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। ঘটনার পরই নড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ ও আবগারি দফতর মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই মদের ঠেক উচ্ছেদ অভিযানে নামে। অভিযানে নেমে অন্তত ১২ টি বেআইনিভাবে চলা মদের ঠেক ভেঙে দেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় এক মদ ব্যবসায়ী-সহ চারজনকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কয়েকশো লিটার মদ। পুলিশের দাবি, পুজোর আগে বেআইনি মদ ব্যবসায় লাগাম দেওয়ার এটাই ছিল প্রথম ধাপ।

পুজোর মুখে বেআইনি মদের বিরুদ্ধে কাঁথিতেও অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ। বেআইনি মদের বিরুদ্ধে রবিবার রামনগর খেজুরি থানার পুলিশ বিভিন্ন বেআইনি মদের ভাটি ও দোকানে অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে চোলাই মদ ভাটি ও বেআইনি মদ বিক্রেতারা পালিয়ে গেলেও পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। প্রচুর চোলাই ও বেআইনি মদ নষ্ট করা হয় বলেও জানা গিয়েছে। রামনগর, খেজুরি থানা ছাড়াও কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিদিনই বেআইনি মদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চালানো হবে বলে কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের নোনাকুড়ি বাজার ও রামতারকহাট এলাকায় বিভিন্ন চোলাই মদের ঠেকে মদ খেয়ে মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গুরুতর অসুস্থ হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। সেই ঘটনার পরও ময়না, খেজুরি-সহ একাধিক জায়গায় বিষাক্ত চোলাই খেয়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু মিছিলের পরও ওইসব এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা যে কমেনি তা টের পাওয়া গিয়েছে মদ ব্যবসায়ীদের হাতে খোদ পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়। রামতারক হাটের কাছে বেআইনি মদের ঠেক চলার অভিযোগ পেয়ে উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল তমলুক থানার পুলিশ। কিন্তু ওইসব ঠেকের মদ ব্যবসায়ী ও তাঁদের সাগরেদরা পুলিশ বাহিনীকে আটকে রেখে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার রেশ কাটার আগেই রবিবার রাতে নোনাকুড়ি বাজারে বেআইনিভাবে চলা মদের ঠেকে মদ্যপদের গোলমালের ঘটনা
প্রকাশ্যে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোনাকুড়ি বাজারের মিনি মার্কেটের পাশেই ২০-২৫ টি মদ, জুয়া, সাট্টার ঠেক চলে রমরমিয়ে। প্রসন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় নেশাখোরদের দৌরাত্ম্য চলে। রবিবার রাতে ওইসব মদের ঠেকে আসা নেশাখোরদের মধ্যে গোলমাল বেঁধেছিল। ঝামেলার সময় ব্লেডের আঘাতে দুই ব্যক্তি জখম হন বলে অভিযোগ। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পুজোর সময় যে সব গোলমাল হয় তার অধিকাংশই মদের জন্য। তাই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বেআইনি মদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। অভিযান লাগাতার ভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে।’’ তমলুক, কাঁথি, এগরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার ও বেআইনি মদ তৈরির কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন