বেআইনি বাজি ঠেকাতে হবে টানা অভিযান

পিংলা-কাণ্ডের জেরে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। প্রাক্‌-দীপাবলির ব্যস্ততা ফিরল পশ্চিম মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রীতিমতো বৈঠক করে বেআইনি বাজির কারবার রুখতে একটানা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। আগামী এক সপ্তাহ ধরে এই অভিযান চলবে। বেআইনি বাজি উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হবে ওই কারবারে জড়িতদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

ব্রাহ্মণবাড়ে বিস্ফোরণস্থলে বম্ব স্কোয়াডের তল্লাশি। শুক্রবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

পিংলা-কাণ্ডের জেরে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। প্রাক্‌-দীপাবলির ব্যস্ততা ফিরল পশ্চিম মেদিনীপুরে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রীতিমতো বৈঠক করে বেআইনি বাজির কারবার রুখতে একটানা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। আগামী এক সপ্তাহ ধরে এই অভিযান চলবে। বেআইনি বাজি উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হবে ওই কারবারে জড়িতদের। মেদিনীপুরে পুলিশের ওই বৈঠকে জেলার বিভিন্ন থানার আইসি- ওসিরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার-সহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। পরে পুলিশ সুপার বলেন, “বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাজি উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশের এক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেআইনি বাজির কারবারে যুক্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কেজি বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “প্রতিটি থানাতেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। বৈঠকেও পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইসি- ওসিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ সাধারণত, দীপাবলির আগেই প্রতি বছর এমন অভিযান চলে।

পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে জোরাল বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রঞ্জন মাইতি যেহেতু ওই বেআইনি বাজি-বোমার কারবারে জড়িত ছিলেন, সে জন্যই সব জেনেও চুপ করে ছিল পুলিশ। বারবার গ্রামবাসীদের তরফে অভিযোগ জানানোর পরেও কারখানা বন্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বিস্ফোরণের পরে অবশ্য পুলিশে তৎপরতা দেখা গিয়েছে। ঘটনার পরদিনই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত রঞ্জনকে। পিংলা থানার ওসি পঙ্কজ মিস্ত্রিকে সাসপেন্ড করে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। ওই পদে এসেছেন অমিত অধিকারী। পুলিশের এক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও পঙ্কজবাবুকেই পিংলা-কাণ্ডের জন্য কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারের মতে, বেআইনি বাজি কারখানার খবর ওসির কাছে থাকা উচিত ছিল।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে বেআইনি বাজি তৈরির কারখানা চলার অভিযোগ নতুন নয়। এই সব কারখানা থেকে পুলিশ প্রতি মাসে টাকাও নেয়। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার আর অবকাশ থাকে না। কেশপুর, গড়বেতা, পিংলা থেকে খড়্গপুর, নারায়ণগড়, দাঁতন, সবং প্রভৃতি এলাকায় মাঝেমধ্যেই বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। খড়্গপুর গ্রামীণের মাওয়া, মেদিনীপুর সদরের ছেড়ুয়া, কেশপুরের অকুলথাঁড়া, গড়বেতার উত্তরবিল বাজি প্রস্তুতকারক এলাকা বলেই পরিচিত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বাজির আড়ালে বোমাই তৈরি হয়। সব জেনেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকে।

কেন আগে পদক্ষেপ করা হয়নি? জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “ব্যবস্থা যে একেবারেই নেওয়া হয়নি তা নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চলেছে।’’ পুলিশের একাংশ অবশ্য আড়ালে বলছেন, অনেক সময় কিছু করার থাকে না! কারণ, কারখানাগুলো যারা চালায় তারা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকার ফলে বেআইনি বাজি তৈরির কারবারিদের কাছে পৌঁছনো অনেক সময়ই সহজ হয় না। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তখন পদক্ষেপ করা হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক থানার পুলিশ কর্মীর আপেক্ষ, “আগে থেকেই যদি ব্যবস্থা নেওয়া হত তাহলে এই গরমে আর বাজি উদ্ধারে দৌড়তে হত না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন