উদ্ধার মোট ৭৪৫ লিটার চোলাই, প্রতিবাদে ভাঙল ঠেক

পাশের পশ্চিম মেদিনীপুরে লড়াইটা শুরু হয়েছে আগেই। সোমবার চোলাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আঁচ এসে পৌঁছেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের কেশাপাটে। যেন এই আন্দোলনটারই অপেক্ষা ছিল।

Advertisement

পার্থপ্রতিম দাস

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৪১
Share:

অভিযান: আবগারি ও পুলিশের যৌথ দেওয়া উদ্যোগে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে কেশাপাট গ্রামের চোলাই মদ তৈরির ঠেক। নিজস্ব চিত্র

পাশের পশ্চিম মেদিনীপুরে লড়াইটা শুরু হয়েছে আগেই। সোমবার চোলাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আঁচ এসে পৌঁছেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের কেশাপাটে। যেন এই আন্দোলনটারই অপেক্ষা ছিল। সেই আন্দোলনের পর জেলাশাসক রশ্মি কমলের নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবারই পাঁশকুড়া থানার কেশাপাটে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাল আবগারি দফতর। কেশাপাট গ্রামের মালিকপাড়া ও দুলেপাড়ায় ভেঙে দেওয়া হয় একাধিক চোলাই ভাটি। গ্রেফতার করা হয় সুবল মালিক ও মনোরঞ্জন মালিক নামে দুই ভাটি মালিককে। আটক করা হয় ৭৪৫ লিটার চোলাই মদ, ১৩,১২০ লিটার মদ তৈরির কাঁচামাল, আর মদ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত একটি মোটরবাইক।

Advertisement

জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘আমরা যখনই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই, তখনই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। চোলাই বিক্রির মতো কাজ কখনই বরদাস্ত করা হবে না। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরও হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশাপাড়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে চোলাই বিক্রির অভিযোগ উঠছিল বহু দিন ধরেই। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়ে বহুবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি বলেই অভিযোগ। চোলাই মদ তৈরির ভাটি উচ্ছেদের দাবিতে বহুবার বিক্ষোভও দেখিয়ে ছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত বারবার সময় চেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীদের। আবগারি ও পুলিশের বিরুদ্ধে জমছিল একের পর এক ক্ষোভের পাহাড়।

Advertisement

সোমবার সেই আগুনেই ঘি পড়ে। চোলাইয়ের বিরুদ্ধে সুর চড়ান স্কুল পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ-সকলে। প্রায় জনা পাঁচশো গ্রামবাসী চল্লিশ মিনিট ধরে অবরোধ করে রেখেছিলেন পাঁশকুড়া ঘাটাল রাজ্য সড়ক। দাবি জানানো হয়, ভেঙে দিতে হবে এলাকার চোলাই ঠেক। দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হলে তবে ওঠে সোমবারের অবরোধ।

সেই খবর জেলাশাসক রশ্মি কমলের কানেও পৌঁছেছিল। মঙ্গলবার সকালে তাঁর নির্দেশেই কেশাপাট গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। কেশাপাট গ্রামের গৃহবধূ রেখা মান্না, ভারতী গায়েনদের অভিযোগ, “গ্রামের স্কুলের সামনে দীর্ঘদিন ধরে চোলাই মদ তৈরি করছিল পঞ্চাশটি পরিবার। চোলাই তৈরির বর্জ্য থেকে নষ্ট হচ্ছে আমাদের চাষের জমি। ওই গন্ধের চোটে স্কুলে কেউ পড়তে যেতে চাইছে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে পথে নেমেছিলাম।’’ কিন্তু প্রতিবারই তো আন্দোলনের ঝাঁঝ কমে গেলেই ফের মাথা চাড়া দেয় চোলাই। ঘাটালের দুধকোমরা তো এরকম ঘটনার সাক্ষী। গলা তুলে স্কুল পড়ুয়া সুলেখা মাইতি বলে, ‘‘ঘাটালের গোপমহলে তো আন্দোলন চলছে। আমরাও হাল ছাড়ব না।’’ সোমবারই গোপমহলের আন্দোলনকারী মহিলারা ‘পাল্টা লাল চোখ’ দেখানোর দাওয়াই দিয়েিছলেন। সেই দাওয়াই মনে রাখতে চান কেশাপাটের বাসিন্দারাও।

চোলাই ভাটি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রতিবারই পঞ্চায়েতের অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। কেশাপাটও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এ দিনের ভাটি উচ্ছেদের পর অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধান দিলীপ সাঁতরার সাফাই, ‘‘চোলাই তৈরি করা এই পরিবারগুলোকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য যে সরকারি প্রকল্পের অধীনে আনা যায়, আমরা সেটা দেখব।’’ অসহযোগিতার অভিযোগ অবশ্য তিনি একেবারেই উড়িেয় দিয়েছেন।

জেলার আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্বপন কুমার হাজরা বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। সমাজের এই ব্যাধি নির্মূল করতে আমরা প্রশাসনের সাথে একেবারে বদ্ধপরিকর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন