ভ্যানামেইয়ের টক্করে চাপড়া চিংড়ি

বিদেশি ভ্যানামেই চিংড়িকে টক্কর দিতে আসছে দেশীয় চাপড়া চিংড়ি! খরচ কম, কিন্তু স্বাদ-গন্ধে কোনও অংশে কম নয় এই চাপড়া— পরীক্ষার পরে এমনটাই দাবি মৎস্যচাষিদের।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

চাপড়া: খেজুরির বাজারে মিলছে এই চিংড়ি। নিজস্ব চিত্র

বিদেশি ভ্যানামেই চিংড়িকে টক্কর দিতে আসছে দেশীয় চাপড়া চিংড়ি! খরচ কম, কিন্তু স্বাদ-গন্ধে কোনও অংশে কম নয় এই চাপড়া— পরীক্ষার পরে এমনটাই দাবি মৎস্যচাষিদের।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ৩ ব্লকের নাচিন্দায় আগামী ৪ এবং ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের চিংড়ি চাষিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘বেঙ্গল অ্যাকোয়া এক্সপো -২০১৮’। সেখানে চিংড়ি রফতানিকারী সংস্থা এবং মৎস্যবিজ্ঞানীদের সামনে চাপড়া চিংড়ির বিশেষত্ব বোঝাবেন জেলার মৎস্যচাষিরা। বিদেশের বাজার ধরতে বছরকয়েক আগে গলদা এবং বাগদার পাশাপাশি উঠে এসেছিল ভ্যানামেই চিংড়ি। বাজারে আধিপত্যও বিস্তার করেছে ওই বিদেশি চিংড়ি। তবে মৎস্যচাষিদের দাবি, চাপড়া বাজারে এলে শীঘ্রই ছবিটা পাল্টাবে।

খেজুরির মুকুটশিলা গ্রামে কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণাকেন্দ্র ‘সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ব্র্যাকিসওয়াটার অ্যাকোয়াকালচারে’র (সিবা) ব্যবস্থাপনায় দেশীয় চাপড়া চিংড়ির চাষ শুরু হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস গিরির খামারে শিবার কাকদ্বীপের প্রকল্প থেকে চাপড়া চিংড়ির মীন এনে শুরু হয়েছিল চাষ। তিনমাসেই প্রায় ২০ গ্রাম ওজন হয়েছে ওই চিংড়ির। লম্বা ২০-২২ সেন্টিমিটার। চিংড়ি চাষিদের দাবি, ভ্যানামেই চিংড়ির চেয়ে কম খরচে বেশি উৎপাদন হয়েছে। সময় লাগছে কম। বাজারে এলে দামও ভ্যানামেইয়ের থেকে কম হবে বলে আশা। কতটা কম? মৎস্যচাষিরা জানাচ্ছেন, ভ্যানামেইয়ের দাম যেখানে প্রতি কিলোগ্রাম ৩০০-৩৫০ টাকা, সেখানে চাপড়ার দাম দাঁড়াবে ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু দেশীয় এই চিংড়ি ভিন্‌দেশি ভ্যানামেইয়ের থেকে স্বাদ, গন্ধ, আয়তনে কোনও অংশে কম নয় বলেই দাবি মৎস্যচাষিদের। বিদেশের বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। আশিসের কথায়, “চাপড়া চিংড়ির উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সবই ভ্যানামেইয়ের চেয়ে বেশি। চাষের পদ্ধতিও সহজ।’’ সিবা’র বিশেষজ্ঞ অক্ষয় পাণিগ্রাহী বলেন, “ভ্যানামেইয়ের তুলনায় চাপড়ার উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৫ গুণ বেশি।’’ মৎস্য দফতরের সহ-মুখ্য আধিকারিক রামকৃষ্ণ সর্দারও মানছেন, ‘‘ভ্যানামেইয়ের চেয়ে চাপড়া ভাল। মীন আরও বেশি পেলে এই চিংড়ির প্রসার বেশি হবে।’’

Advertisement

ভ্যানামেইয়ের পোনা বিদেশ থেকে আনতে হয়। কিন্তু চাপড়ার মীন মেলে বঙ্গোপসাগরে। খেজুরির বেশ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই চাপ়ড়া চাষ শুরু করেছেন কয়েকজন মৎস্যচাষি। তাঁদের দেখে আরও কয়েকজন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাগদা চাষি সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মদনমোহন মণ্ডল বলেন, “বাগদা এবং ভ্যানামেই চিংড়ি চাষে ব্যাপক ক্ষতির ফলে আমরা বিকল্প চাষের সন্ধানে ছিলাম। মনে হচ্ছে সেই খোঁজ শেষ হল।’’ তিনি জানান, ভ্যানামেই চাষে বিদেশ থেকে মীন আনতে হয়। তা ব্যয়সাপেক্ষ। তার উপর রয়েছে ভাইরাস সংক্রমণের ভয়। আবহাওয়ার তারতম্য হলেও চাষে ক্ষতি হয়। কিন্তু চাপড়া চাষে ঝুঁকি কম থাকায় চাষিরা উৎসাহিত হবেন বলে আশা মদনমোহনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন