আমিই অসুস্থ, বলছেন ডাক্তার

প্রসূতি মৃত্যু, অভিযোগ গাফিলতির

এ দিন প্রসূতির পরিবার ও পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় কাঁথি থানার পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাঁথি থানা বা হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৩
Share:

অসন্তোষ: হাসপাতালে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

কখনও শোনা যাচ্ছে চিকিৎসকের হৃদ্‌রোগ। কখনও শোনা গেল, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। শনিবার রাতে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর সামনে এল এমনই সব ‘তথ্য’।

Advertisement

১৩ অক্টোবর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের ঘোষপুরের গৌতম দাসের স্ত্রী শেফালি দাস (২৬)। তাঁর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক নিরাপদ জানা। একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন শেফালিদেবী। কিন্তু এর পরেই দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। অভিযোগ, চিকিৎসকের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক বন্ধু বাবলু দে-র অভিযোগ, “মৃত্যুর পর চিকিৎসক জানান, তিনি হার্টের রোগী। বাধ্য হয়ে চিকিৎসা করছেন। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে আমরা জেনেছি, শ্বাসনালিতে রক্ত ঢুকে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসক অসুস্থ হওয়ার খেসারত রোগীরা কেন দেবে?” আর এক পরিজন শেখ আনোয়ার রহমান বলেন, “মৃত্যুর কারণ নিয়ে চিকিৎসককের বক্তব্য, সিজারের আগে সব পরীক্ষার ব্যবস্থা এখানে নেই। সে সব থাকলে সিজারের আগে সব পরীক্ষা করেই এগনো যেত। যদি তাই হয়, তবে ডাক্তারবাবু সিজার করলেন কেন?”

এ দিন প্রসূতির পরিবার ও পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় কাঁথি থানার পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাঁথি থানা বা হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়নি। এ বিষয়ে বাবলুবাবুর বক্তব্য, “হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ও স্থানীয় কাউন্সিলর আমাদের বিক্ষোভ না দেখাতে অনুরোধ জানান। কারণ হাসপাতালে অনেক রোগী রয়েছে। তাঁরা সোমবার এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ভরসা রাখছি। সুবিচার না পেলে আইনের পথে যাব কি না, ভাবব।”

Advertisement

এই ঘটনায় হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “সিজারের পর শেফালিদেবী প্রায় তিন ঘণ্টা সুস্থ ছিলেন। তার পর তাঁর রক্তচাপ কমতে থাকে। চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত আইসিইউ-তে নিয়ে যান। সেখানে ঘণ্টা তিনেক চেষ্টা পরেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এমবলিজম’। সিজার না হলেও এমন পরিস্থিতি হতে পারত। গোটা দেশে এই কারণে বহু প্রসূতির মৃত্যু হয়।” জেলা সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত বলেন, “নিরাপদবাবু অসুস্থ হলে ছুটি নিতে পারেন। প্রয়োজনে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে পারেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা পরিষেবার বিঘ্ন ঘটলে, তা কাম্য নয়।” এ ছাড়া ওই চিকিৎসকের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, প্রসূতিদের জন্য ‘জননী সুরক্ষা’ কার্যক্রমে পিপিপি মডেলে বেসরকারি সংস্থাও যুক্ত রয়েছে। চাইলে কেউ সেই পরিষেবাও নিতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রে কোনও টাকা দিতে হবে বলেও জানান সমুদ্রবাবু। তাঁর কথায়, “এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।”

এ দিকে, শেফালিদেবীর শিশু সন্তান এখন সুস্থ। সে বাবার কাছেই রয়েছে। কোনও ময়না তদন্ত ছাড়াই শেফালিদেবীর শেষকৃত্ব সম্পন্ন হয়েছে তাঁর গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন