রেডিয়োলজিস্ট নেই হাসপাতালে

সোনোগ্রাফি না করেই ফিরল প্রসূতি

হাসপাতাল সূত্রে প্রকাশ, কয়েক বছর আগে হাসপাতালে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু যন্ত্রটি যিনি চালাতেন, সেই রেডিওলজিস্ট বছর দুয়েক ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:১৬
Share:

পিপিপি মডেলের মাধ্যমে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ক্লিনিক। নিজস্ব চিত্র

কাঁথি রাউতারার বাসিন্দা সীমা মালি। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সীমার হঠাৎই পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাড়ির লোকেরা তড়িঘড়ি বধূকে কাঁথির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক সীমাদেবীকে দেখেন। তিনি জানান, রোগীর আলট্রাসোনোগ্রাফি করা প্রয়োজন। এর পরেই সীমাদেবীর বাড়ির লোকেরা আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু জানাতে পারেন কাঁথি হাসপাতালে আলট্রাসোনোগ্রাফি করার বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় সেখানে তা করানো যাবে না। হাসপাতাল থেকে পরিবারের লোকজনকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয় আলট্রাসোনোগ্রাফির জন্য।

Advertisement

কিন্তু খোঁজখবর করে রোগীর বাড়ির লোকেরা জানতে পারেন, বিকেল চারটার পর ওই সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। কাঁথি শহরে চারটি আলট্রাসোনোগ্রাফি ক্লিনিক রয়েছে। বাকিগুলিতেতে রোগীর পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন সেখানে চিকিৎসক নেই। তাই আলট্রাসোনোগ্রাফি করা সম্ভব নয়।

হাসপাতাল সূত্রে প্রকাশ, কয়েক বছর আগে হাসপাতালে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু যন্ত্রটি যিনি চালাতেন, সেই রেডিওলজিস্ট বছর দুয়েক ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নতুন ভবন মাতৃমার জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে আরও একটি অত্যাধুনিক আলট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেডিওলজিস্টের অভাবে সেটিও পড়ে রয়েছে। রোগীদের পরিষেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি আলট্রাসোনোগ্রাফি সেন্টারের চুক্তি করেছেন। সেখানেই হাসপাতালের রোগীরা আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বিকেল চারটের আগে আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হয়। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতলে একজন রেডিওলজিস্টের আশু প্রয়োজন। আমরা বহুদিন ধরে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এর জন্য দরবার করছি।’’

Advertisement

শুধু কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল নয়, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা হলেও সেখানেও হাসপাতালগুলিতে কোনও রেডিয়োলজিস্ট নেই বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত বলেন, “সারা রাজ্যেই রেডিয়োলজিস্টের সঙ্কট রয়েছে। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে যিনি ছিলেন, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে হাসপাতলে আসছেন না। কারণ তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর জায়গায় একজন রেডিওলজিস্ট পাঠানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’

কিন্তু কাঁথির বেসরকারি আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টারগুলিতে বিকেল চারটের পর পরিষেবা পাওয়া যায় না কেন ?

কাঁথি স্কুলবাজারে ‘শুশ্রুষা ইমেজিং ক্লিনিক’-এ আলট্রাসোনোগ্রাফির জন্য লম্বা লাইন পড়ে সকাল থেকে। প্রতিদিনই এখানে আলট্রাসোনোগ্রাফি হয়। কিন্তু বিকেল চারটের পর পরিষেবা মেলে না। ক্লিনিকের কর্ণধার অর্ণব মজুমদার বলেন, “যে রেডিয়োলজিস্ট এই সেন্টারে রোগী দেখেন, তিনি বিকেল চারটের পর আর এখানে থাকেন না। ফলে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা সম্ভব হয় না।’’ প্রসঙ্গত, পিপিপি মডেলে এই ক্লিনিকের সঙ্গে রোগীদের আলট্রাসোনোগ্রাফি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

কাঁথি উদয়ন সিনেমা রোডে আর একটি আলট্রাসোনোগ্রাফি করার ক্লিনিকের রেডিয়োলজিস্ট জানান, প্রতিদিন আলট্রাসোনোগ্রাফির রোগীর সংখ্যা বেশি হয় না। ফলে দুজন রেডিয়োলজিস্ট রাখার প্রয়োজন হয় না।

সীমাদেবীর পরিবারের প্রশ্ন, বিকেল পাঁচটার পর জরুরি অবস্থায় আলট্রাসোনোগ্রাফি করানোর প্রয়োজন হলে কোনও রোগী কোথায় করাবেন? তা ছাড়া যে ক্লিনিকের সঙ্গে হাসপাতালের এমন ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে হাসপাতালের রোগীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না কেন? অবিলম্বে এ ব্যাপারে হাসপাতাস কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ করা উচিত।

কাঁথি মহকুমা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, “ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রেডিয়োলজিস্ট এনে যাতে আলট্রাসোনোগ্রাফি পরিষেবা চালু করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন