জমানো টাকায় ‘স্বাস্থ্যমন্দির’ পূজারির

স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের নিখরচায় চিকিৎসা করবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারেননি। সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে পারিবারিক পেশা পৌরহিত্য বাছতে বাধ্য হয়েছেন ঝাড়গ্রামের জয়ন্ত আচার্য। তবু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি বছর চুয়াল্লিশের জয়ন্তবাবু।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৫
Share:

চলছে চিকিৎসা। পাশে দাঁড়িয়ে জয়ন্ত আচার্য। নিজস্ব চিত্র।

স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের নিখরচায় চিকিৎসা করবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারেননি। সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে পারিবারিক পেশা পৌরহিত্য বাছতে বাধ্য হয়েছেন ঝাড়গ্রামের জয়ন্ত আচার্য। তবু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি বছর চুয়াল্লিশের জয়ন্তবাবু। আর সেই পৌরহিত্যের টাকা জমিয়ে আস্ত একটা দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র খুলে ফেলেছেন তিনি।

Advertisement

রবিবার শুরু হল সেই স্বপ্নের উড়ান। ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষপল্লি এলাকার একটি ক্লাবঘরে শুরু হল দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। জয়ন্তবাবুর আবেদনে সাড়া দিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ, বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজকুমার মণ্ডল-রা সেখানে এ দিন ৯৮ জন দুঃস্থ বাসিন্দার চিকিৎসা করলেন। আপাতত, সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার খোলা থাকবে চিকিৎসা কেন্দ্রটি। বিনামূল্যে ওষুধ ও পরীক্ষারও সুযোগ পাবেন দরিদ্ররা।

জয়ন্তবাবুর আদিবাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের কাপাসি গ্রামে। বাবা রবীন্দ্রবাবু পৌরহিত্য করে সংসার চালাতেন। জয়ন্তবাবু তখন খুব ছোট। একবার হাতি ঢুকে তাঁদের মাটির বাড়ি ভেঙে দেয়। মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে গুরুতর জখম হন জয়ন্তবাবুর মা গায়ত্রীদেবী। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসায় দিশেহারা বাবাকে দরজায় দরজায় ঘুরতে দেখে মনে জেদ চেপে গিয়েছিল চিকিৎসক হবেন। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে তাঁকেও পৌরহিত্য শুরু করতে হয়। এখন অরণ্যশহরের সত্যবানপল্লিতে বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। লোকের বাড়ি বাড়ি পুজোর পাশাপাশি, শহরের দু’টি মন্দিরেও নিয়মিত পুজো করেন। সেই থেকে তিলে তিলে টাকা জমিয়ে চলেছেন দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র গড়বেন বলে। জয়ন্তবাবুর কথায়, “প্রণামী শাড়ি-ধুতি ও যে সব দান পাই, তা বিক্রি করে লাখ খানেক টাকা জমিয়েছি। তা দিয়েই আর কী…’’

Advertisement

শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা প্রশান্ত রায়ের সাহায্যে এলাকারই একটি ক্লাবঘর জয়ন্তবাবুকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা করাতে আসা রিকশাচালক গুরুপদ মিদ্যা, পরিচারিকা মীরা নামহাতা, কালী দলুইদের বক্তব্য, “ঠাকুরমশাই বলেছেন, এটা স্বাস্থ্যমন্দির। সেখানে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।” চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ ও রাজকুমার মণ্ডলও বলেন, ‘‘মনের জোরে এমনটাও যে করা যায়, সেটা জয়ন্তবাবুকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এমন মানুষের পাশে থাকতে পেরে ভাল লাগছে।”

কেন শহরে দাতব্য চিকিত্‌সা কেন্দ্র খুললেন? জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘হাড়ভাঙা খাটুনির রোজ নামচায় অনেকেই নানা অসুখে ভুগছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তাঁরা উদাসীন। তাই ওদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে চাই।’’ জয়ন্তবাবুর স্ত্রী মমতা আচার্য বলেন, “আমার স্বামী মানুষের জন্য স্বাস্থ্য মন্দির গড়েছেন। এর থেকে ভাল কাজ আর কী হতে পারে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন