সংশোধনাগারে নেই ‘সেন্সর’

জেলে অবাধে মোবাইলে কথা

মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি সুমন সিংহ ওরফে মোটা রাজার সেল থেকে বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেন জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। আগেও জেলের মধ্যে থেকে একাধিকবার মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share:

মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি সুমন সিংহ ওরফে মোটা রাজার সেল থেকে বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেন জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। আগেও জেলের মধ্যে থেকে একাধিকবার মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। যদিও তারপরেও জেলে বসানো হয়নি সেন্সর (জ্যামার)। ফলে দু’একটি ক্ষেত্রে মোবাইল ধরা পড়লেও অনেক বন্দি ফোন ব্যবহার করলেও তা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। প্রশ্নের মুখে পড়ছে জেলের নিরাপত্তাও।

Advertisement

মেদিনীপুর জেলে যে সেন্সর নেই তা মানছেন জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। আলিপুর, প্রেসিডেন্সি ও দমদম সংশোধনাগারে সেন্সর রয়েছে। মেদিনীপুর জেলেও কি সেন্সর লাগানোর কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? জেলের এক কর্তার জবাব, “এখনও এমন কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। আসলে এটা খুব ব্যয়সাপেক্ষ।” তবে এই জেল কর্তা মানছেন, “মেদিনীপুরের সংশোধনাগারটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। এ বার বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময়ে এসেছে।”

কারা দফতরের এক সূত্রে খবর, জেলের মধ্যে থেকে মোবাইল উদ্ধারের ঘটনা মেদিনীপুরে নতুন নয়। বুধবার যে সুমন সিংহের সেল থেকে মোবাইল উদ্ধার হয়। মোটা রাজার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে। খুন, খুনের চেষ্টা, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অভিযোগ রয়েছে। মোটা রাজা জেলে বসেই তার পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলছিল বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। নির্দিষ্ট সূত্রেই এই খবর পেয়েছিল পুলিশ। পুলিশ জেলকে বিষয়টি জানায়। বুধবার সন্ধ্যায় রাজার সেলে তল্লাশি চলে। উদ্ধার
হয় মোবাইল।

Advertisement

এই মোবাইল কি ভাবে জেলের মধ্যে এসেছে, কবে থেকে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা যুক্ত, তদন্তে সেই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জেলের একাংশ কর্মীর মাধ্যমেই এই সব জেলে পাচার হয় বলে অভিযোগ। নিরাপত্তার ফাঁক গলেই এ সব বন্দিদের কাছে পৌঁছে যায়।

কেন এ সব পাচারে রাশ টানা যাচ্ছে না? মেদিনীপুর জেলের এক কর্তার মন্তব্য, “মাঝে মধ্যে মোবাইল, মাদক উদ্ধার হয়। এটা তো অস্বীকার করছি না। তবে ধরা পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।” মেদিনীপুর জেলে এক হাজারেরও বেশি বন্দি থাকেন। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি যেমন রয়েছে, তেমনই বিচারাধীন বন্দিও রয়েছে। শুধু মোবাইল নয়, জেলের মধ্যে থেকে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্যও উদ্ধার হয়। জেলের এক কর্তা মানছেন, “জেলের মধ্যে থেকে এ সব উদ্ধারের ঘটনা উদ্বেগেরই।”

কোনও জেলকর্মীর সহায়তা ছাড়া এ ভাবে কি জেলের মধ্যে মোবাইল পাচার সম্ভব? জেলের ওই কর্তার জবাব, “জেলের মধ্যে এমন কিছু উদ্ধার হলে জানার চেষ্টা হয় তা কী ভাবে ঢুকল। কোনও কর্মী জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তদন্তে এমন কোনও প্রমাণ মিললে এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।” মেদিনীপুরে মাওবাদী সন্দেহে ধৃত বেশ কয়েকজন যেমন রয়েছে, তেমন কুখ্যাত কয়েকজন দুষ্কৃতীও রয়েছে। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা যে রয়েছে তা মেনে এক জেলের এক কর্তা বলেন, “যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, সেটা হয়তো পুরোপুরি নেই। আসলে আর্থিক সঙ্গতি না- থাকায় প্রয়োজনীয় সব কিছু হয়তো এখনই করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ধীরে ধীরে করা হবে। কয়েকটি কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন