মজেছে মেদিনীপুর খাল, সমস্যা জলসেচে

গ্রামের পাশেই রয়েছে মেদিনীপুর খাল। কিন্তু প্রতি বছর শীতে নিজেদের জমিতে বোরো ধান চাষের সেচের জন্য মোটা টাকা খরচ করতে হয় কোলাঘাটের ভোগপুর এলাকার কোদালিয়া গ্রামের চাষিদের। ফলে ধান চাষের খরচ বেড়েছে অনেকটা। কারণ মজে যাওয়া ওই ক্যানেল কবে সংস্কার হবে, তার কোনও আশা দেখছেন না কোলাঘাটের চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৫
Share:

মেদিনীপুর খাল যেন নালা। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

গ্রামের পাশেই রয়েছে মেদিনীপুর খাল। কিন্তু প্রতি বছর শীতে নিজেদের জমিতে বোরো ধান চাষের সেচের জন্য মোটা টাকা খরচ করতে হয় কোলাঘাটের ভোগপুর এলাকার কোদালিয়া গ্রামের চাষিদের। ফলে ধান চাষের খরচ বেড়েছে অনেকটা। কারণ মজে যাওয়া ওই ক্যানেল কবে সংস্কার হবে, তার কোনও আশা দেখছেন না কোলাঘাটের চাষিরা।

Advertisement

খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য সেচ দফতরে দাবি জানিয়েছে এলাকার কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার কল্পরূপ পাল বলেন, ‘‘মেদিনীপুর খালের নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে খাল সংস্কারের জন্য আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই।’’

সেচ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজ আমলে খনন করা উলুবেড়িয়া থেকে কোলাঘাটের কাছে রূপনারায়ণ নদী সংলগ্ন কাঁসাই নদী পর্যন্ত খালটি মেদিনীপুর খাল নামে পরিচিত। দেনান থেকে পাঁশকুড়ার সদরঘাট পর্যন্ত খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, আগে শীতের সময় কংসাবতী ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল কাঁসাই নদীপথে পাঁশকুড়া সদরঘাট হয়ে মেদিনীপুর খাল দিয়ে কোলাঘাটের দিকে আসত। ওই জলেই বোরোধান চাষ করা হত।

Advertisement

সেচ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, মেদিনীপুর খালের মাধ্যমে কোলাঘাটের ৫২ টি, পাঁশকুড়া ব্লকের ২৯ টি, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ১২ টি ও তমলুক ব্লকের ২ টি মৌজা মিলিয়ে ৯৫ টি মৌজা সেচ সেবিত। কিন্তু খাল মজে যাওয়ায় এখন চাষিরা শীতে বোরোচাষের সেচের জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ৫২ বছরের চাষি স্বপন সেন বলেন, ‘‘বাড়ির দু’বিঘে জমিতে বোরোধান চাষ করি। এখন খাল দিয়ে জল আসে না। বাধ্য হয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাড়া দূষিত জল দিয়েই চাষ করতে হচ্ছে।’’ কোদালিয়া গ্রামের চাষি বৃদ্ধ সঞ্জয় সাহু বলেন, ‘‘খালে জল না আসায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য জল মেশিনের সাহায্যে তুলে জমিতে চাষের কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এমনকি শ্যালো বসিয়ে জল তুলতে হচ্ছে। এজন্য জলসেচ বাবদ প্রতি বিঘায় এক হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’’

কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘১৯৭৫ সাল নাগাদ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার সময় থেকেই খাল মজতে শুরু করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ছাই জল ফেলার ফলে খালের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ পুরোপুরি মজে গিয়েছে। কোলাঘাট, পাঁশকুড়া এবং তমলুকের কয়েক হাজার কৃষকের চাষের জলসেচ ও বর্ষায় জল নিকাশির স্বার্থে ক্যানেল পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার করতে হবে।’’

কবে এই আবেদনে সেচ দফতর সাড়া দেয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন