বৌভাতের আসরে থ্যালাসেমিয়া রোধের বার্তা

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার বার্তা থেকে রক্তদান, আছে লোকসংস্কৃতি প্রসারের বার্তাও। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা আলোচনাসভা নয়, রক্তদান ও বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার বার্তা দেওয়া হল বৌভাতের আসরে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৭
Share:

সজাগ: আমন্ত্রণ পত্রে সচেতনতার বার্তা। নিজস্ব চিত্র

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার বার্তা থেকে রক্তদান, আছে লোকসংস্কৃতি প্রসারের বার্তাও। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা আলোচনাসভা নয়, রক্তদান ও বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার বার্তা দেওয়া হল বৌভাতের আসরে।

Advertisement

নিমন্ত্রণের কার্ড হাতে পেয়েই অবাক হয়েছিলেন অনেকে। বিয়ের কার্ডের একদিকে লেখা ছিল, ‘সেভ গ্রিন সেভ আর্থ’। অন্য দিকে, রক্তদান ও থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। ছিল লোকসংস্কৃতির ছবি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গড়বেতার ফতেসিংহপুরে বৌভাতের আসরে এসে আরও অবাক হলেন তাঁরা। প্যান্ডেলের ইতিউতি চোখে পড়ল সেই একই বার্তা দেওয়া পোস্টার। সবই হাতে লেখা। হাতে লেখা সেই সব পোস্টারের কোনওটায় লেখা ছিল, ‘রক্তদান মহান দান’, আবার কোনওটায় ‘লোকসংস্কৃতি বেঁচে থাক’।

এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁর কথায়, “খুব ভাল উদ্যোগ। এ ভাবেই তো সচেতনতা বাড়ে। রক্তদান নিয়ে সচেতনতা রয়েছে। সেই সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার। রক্তদান জীবনদান, এই প্রচার চলেই। বিয়ের আসরেও এই প্রচার চললে তার থেকে ভাল কিছু হয় না।”

Advertisement

সবুজ আগলানোর প্রচারকে সাধুবাদ জানিয়ে মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলছেন, “আমাদের সকলেরই উচিত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সবুজকে রক্ষা করা। সবুজকে আগলে রাখা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও মানব সভ্যতা রক্ষার জন্যই আরও বেশি করে সবুজকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। বিয়ের আসরে এমন সচেতনতার বার্তা দেওয়া সত্যিই প্রশংসার।”

গত মঙ্গলবার বিয়ে হয় পল্লব ও অর্পিতার। পল্লব গড়বেতার আমলাগোড়ার ঝাড়বনির বাসিন্দা। অর্পিতার বাড়ি ডেবরার ধামতোড়ের ভগবানবসানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গড়বেতার ফতেসিংহপুরে বৌভাতের আসর বসে। ছেলের বিয়েতে কেন এমন অভিনব উদ্যোগ? পল্লবের বাবা কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমাদের সকলেরই সমাজের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই প্রয়াস।”

পরিবার সূত্রে খবর, বিয়ের আসরে এমন বার্তা দেওয়ার সামগ্রিক পরিকল্পনা কাশীনাথবাবুর দাদা সুভাষ চট্টোপাধ্যায়ের। সুভাষবাবু ব্যানার্জীডাঙা হাইস্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বরাবর সামাজিক কাজকর্মে তাঁর ঝোঁক রয়েছে। সময় পেলে গল্প-কবিতাও লেখেন। এখনও নিজেকে নানা সামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে রেখেছেন। সুভাষবাবু বলছিলেন, “একটু অন্য ভাবে ভাবলে আমরা সকলেই সামাজিক বার্তা দিতে পারি। শুধু উদ্যোগ থাকা দরকার।” তাঁর কথায়, “বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলো নিয়ে অতিথিদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। সকলে এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।” খুশি নববধূ অর্পিতাও। তাঁর কথায়, “সামাজিক সচেতনতায় এমন উদ্যোগ দেখে আমার নিজেরও ভাল লাগছে। আমি সত্যিই খুব খুশি।” খুশি অর্পিতার বাবা তপন চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, “এই কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।” সুভাষবাবুর ছেলে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বাবা এ রকমই। সমাজের জন্য কিছু করতে পারলে ওনার নিজেরই ভাল লাগে। এই ভাললাগাটা অন্য রকম। অন্য একটা অনুভূতি।’’

গ্রামীণ শিল্পসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এ ভাবেই সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জেলার তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার। তাঁর কথায়, “সত্যিই অভিনব উদ্যোগ। বিয়ের কার্ডে কিংবা পোস্টারে এমন বার্তার প্রশংসা করতেই হয়। আমাদের সকলেরই উচিত, গ্রামীণ শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন